বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বেতন বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে

ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাড়ছে দাম অবিরাম/চালের ডালের তেলের নুনের/হাঁড়ির বাড়ির গাড়ির চুনের/আলু মাঙ্গা বালু মাঙ্গা/কাপড় কিনতে লাগে দাঙ্গা/উঠছে বাজার হু-হু করে সব কিছুর/আঁকের শাকের কাঠের পাটের আম লিচুর/খাওয়ার জিনিস শোয়ার জিনিস/পরার জিনিস মরার জিনিস/কিছু ছোঁয়ার সাধ্যি নাই/ঘাটতি কেবল যেদিক চাই। বাজারদর নিয়ে কবি আবুল হোসেনের এই কবিতায় বর্তমান বাজারের চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। দ্রব্যমূল্য যেখানে বাড়ছে রকেটের গতিতে, সেখানে ঢাকার রাস্তার যানজটে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা বাসের মতোই বাড়ছে আয় বাড়ার গতি।
চাল-ডাল-তেল, রান্নার গ্যাস থেকে টুথপেস্ট সবকিছুতে বাড়তি দামের খড়গ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে দেশজুড়ে চলছে অস্থিরতা। কোথাও নেই এতটুকুও স্বস্তি। নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত। কারওই হিসাব মিলছে না আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের। প্রায় প্রত্যেকেই বলছেন-আয় বাড়ছে না, ব্যয় সামলাবো কীভাবে? তেমনই একজন তানজির আহমেদ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। তবে বেতনের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারে দোকান থেকে দোকানে ছুটতে দেখা গেছে তাকে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত তিনি। তানজির বলেন, এখন বাজারে সমস্ত পণ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। আমরা চাকরি করি। বেতন তো এক টাকাও বাড়েনি। চাকরিজীবীদের জন্য আসলেই খুব কষ্টের ব্যাপার। যারা ব্যবসায়ী তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু যারা কিনছে তাদের আয়ের বাড়তি উৎস নেই। এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। বেতনের অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বাকি টাকায় সংসার খরচ ও সন্তানদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় হচ্ছে। মাস শেষে পকেটে কোনো টাকা থাকে না।
শুধু তানজিরই নন। এমন পরিস্থিতির শিকার এই সমাজেরই সিংহভাগ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই-একদিনের ব্যবধানে কমবেশি সব ধরণের সবজি কিনতে ৫-১০ টাকা বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। শুধু সবজিই নেই এই দর বৃদ্ধির তালিকায়-বাঙালির খাবারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত চালের দামেও পড়েছে এর প্রভাব। গরিবের আমিষ খ্যাত ডিমেও যুক্ত হয়েছে বাড়তি খরচের বোঝা। ক্রেতাদের পকেট কাটা নিয়মিত হলেও প্রতিনিয়তই অন্তত একটি করে অযুহাত থাকে ব্যবসায়ীদের সামনে। এবারের অযুহাতের নাম বৃষ্টি।
গতকাল রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারে এক সবজি বিক্রেতার সঙ্গে দাম বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন সবজির দাম কিছুটা কম ছিল। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার থেকে বেড়েছে দাম। বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম। এজন্য না কি পাইকারি বাজার থেকে মোটামুটি সব সবজি ৫-১০ টাকা বেশি দামে কিনতে হয়েছে। আর তাই বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন এ বিক্রেতা।
একই বাজারে এক ক্রেতাকে দেখা গেলো সবজির দাম জিজ্ঞেস করছেন। কোনটার দাম কত? ক্রেতার এ প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতা আজিজ মিয়া এক নিশ্বাসে বলে দিলেন- পেঁপে শুধু ৩০, ঢ্যাঁড়শ-পটল ৫০, চিচিঙ্গা-কাঁকরোল-উস্তা-ঝিঙা ৬০, আর বরবটি-বেগুন ৮০ টাকা। এসব সবজির দাম একশো পেরোয়নি। ক্রেতা আবার জানতে চাইলে আজিজ মিয়া মুখ উঁচিয়ে বলে দিলেন, টমেটো-গাজর ১২০ টাকা। একনজরে এটাই সবজির বাজারের চিত্র।
সবজি ছাড়াও বাজারে দেখা গেছে চাল ও ডিমের দামও বেশি। মোটা-সরু সব চালের দামই বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে স্বর্ণা ৫০-৫২ টাকা ও বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। অথচ এর আগে প্রতি কেজি গুটি স্বর্ণা ৪৮-৫০ টাকা ও বিআর-২৮ এর দাম ছিল ৫৮-৬০ টাকা। এছাড়া আগের চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল। এসব চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০-৮৪ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এখন চালের সিজন (মৌসুম) শেষ। চাল আমদানি হলেও বাজারে সেগুলো আসছে না। এজন্য দাম বাড়তি। মিলপর্যায়ে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০-১৫০ টাকার মতো বেড়েছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও মিলছে না চাহিদামতো চাল। মোকামে যে পরিমাণ চালের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বাজারে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। তিনদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে ডজনপ্রতি ডিম ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অস্থিতিশীল ছিল ডিমের বাজার। সে সময় ডিমের ডজন ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে দেশে কখনো ডিমের দামের এতটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি। এখন আবার সেই পথে হাঁটছে পণ্যটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ডজন নিলে ১৪৫-১৫০ টাকা। যদিও কিছু কিছু বাজারে ডজনে ৫-১০ টাকা কম নিতে দেখা গেছে। তবে সে সংখ্যা খুব কম। ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডিমের সরবরাহ কম। সেজন্য দাম বেড়েছে।
ডিমের পাশাপাশি বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ৮শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা। রুই আকার ভেদে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ টাকা, কাতল আকার ভেদে ১৮০ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দাম কমার কারণ হিসেবে কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী জানান, বৃষ্টির পর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে।
এদিকে মুদি পণ্যের দাম নতুন করে বাড়েনি বা কমেনি। আগের চড়া দামেই আটকে আছে। শুধু খুচরায় পাম তেলের দাম ৫ টাকা কমে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বোতলজাত অন্য কোনো ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির গোথশতের দামও। গরুর গোশতের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ দরে। খাসির গোশতের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন