শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে আশ্বিনা আমের ভাগ্য

ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষে এ আমের সাথে চাষিদের ভাগ্যও বদলেছে

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

‘আমের নাম আশ্বিনা, ধারে কাছেও যাস না’- এমন প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে আশ্বিনা নামের সাথে। কারণ আমটি গায়ে গতরে ফজলি আমের কাছাকাছি হলেও কালচে সবুজ রঙ আর স্বাদে ভীষণ টক। আর পাকলে গায়ের চামড়া একেবারে বুড়ো মানুষের মত কুঁচকে যায়। হয় আরো শ্রীহীন। এ কারণে ফলের রাজা আমের সুখ্যাতি তার ভাগ্যে জোটেনি।

প্রযুক্তির কল্যাণে জন্ম থেকে অবহেলিত আমটির কপাল খুলেছে। ফ্রুট ব্যাগিং এর কল্যাণে বদলেছে এর রঙ আর স্বাদ। গাঢ় সবুজ নয়, একেবারে টকটকে হলুদ আভা গায়ে মেখে আম-রসিকদের সামনে হাজির আশ্বিনা। আবার বাগানে যখন অন্য কোনো আম নেই, তখনই বাজার মাতাচ্ছে। দামও বেশ চড়া। খুশী বাগান মালিকরা। এতদিন যে আমটি আচার আর আমচুরের জন্য ব্যবহৃত হতো এখন আম-রসিকদের টেবিলে চলে গেছে। বিগত বছরগুলোয় আশ্বিনায় আম এক দেড় হাজার টাকা মণের বেশি দাম পাওয়া যায়নি। এখন মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে আট-নয় হাজার টাকা।
বিশিষ্ট আমবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশে ফ্রুট ব্যাগিং আমের জনক ড. শরফ উদ্দিন ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষে এ আমের ভাগ্য যেমন পাল্টেছে, তেমনি আমচাষিদের ভাগ্যও বদলে গেছে। ২০১৬ সালে যখন এসব আমে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তখন ৩টি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি ছিল স্বাদে পরিবর্তন। আমগুলো সময়ের আগে পাড়া না হওয়ায় এর মিষ্টতা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল রঙে পরিবর্তন। বৃষ্টিতে না ভেজার কারণে এর রঙ অক্ষুণ্ন থাকে। তৃতীয়টি ব্যাগের কারণে আমে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।
এতদিন আমটি থেকে ক্রেতা কেন বিমুখ ছিল- এর কারণ সম্পর্কে জনাব শরফ উদ্দিন বলেন, আমটি মওসুমের একেবারে শেষে আশ্বিন মাসে পরিপক্ক হয়। এজন্য আমটির নাম হয়েছে আশ্বিনা। তবে শুরুর দিকে আমের স্বাদটা ভীষণ টক থাকে। তাছাড়া গায়ের রঙও আকর্ষণীয় নয়। আবার পাকলে বুড়ো মানুষের চামড়ার মত কুঁচকে যায়। ফলে আমটি ভোক্তাপ্রিয়তা পায়নি।
তিনি বলেন, অন্যান্য আমের দেখাদেখি আমচাষীরা আশ্বিনা আমে ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু এবং ঠিক পরিপক্ক সময়ে পাড়ায় রঙ একেবারে পাল্টে গেছে। আর স্বাদ আগে থেকে তো মিষ্ট ছিল, কিন্তু ক্রেতার অপছন্দের কারণে আমটি সময়মতো বাজারজাত করা হতো না। ফলে আশ্বিনা আম টক-এর বদনাম থেকে বের হতে পারেনি। তবে এখন দিন বদলেছে। মানুষ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে। যার সুফল তো আমের বাজারেই দেখতে পাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মোট বার্ষিক আম উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টন। এর প্রায় পনের শতাংশই আশ্বিনা আম।
আশ্বিনা আমের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে এবং বাকি অংশ আসে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও অন্যান্য জেলা থেকে।
ম্যাঙ্গোম্যানখ্যাত আম উৎপাদনকারী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমরা এখনকার মতো কখনও আশ্বিনা আমের যত্ন নেইনি। তাই ফলও পাইনি। এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছি’।
বিশিষ্ট আম গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘সবচেয়ে নাবিজাত আম বাজারে যখন সব আম শেষে হয়ে যায় তখন বাজারে আসে আশ্বিনা আম। গাছে মুকুল আসার পর ফল পরিপক্ক হতে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফল পাড়ার পর পাকতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগে। পাকলেও গাঢ় সবুজ থাকে। খোসা মাঝারি মোটা। বেশি পাকলে চামড়া কুঁচকে যায়। এ জাতের আমটি রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় বেশি দেখা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD Swiet Ali ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
আশ্বিনা আমের নাম নিতে গেলে অবশ্যই সবার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে স্মরন করতে হবে।কারন আশ্বিনা আমের ৬০-৭০ ভাগ আমই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন