টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় গতকাল শুক্রবারও বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত ছিল। নেতৃবৃন্দ সরকারের ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধারে অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মাদরাসায় প্রথা অনুযায়ী নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ ও দায়ি ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা এবং মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে বরাবরের মত নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে পরিচালিত হতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : টাঙ্গাইল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রধান আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী ও দলের নারায়ণগঞ্জ জেলা আমীর আলহাজ আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি। এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা কেন্দ্র মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদে একজন বিধর্মীকে নিয়োগ দিয়ে বৃটিশ শাসকদের অনুকরণ করা হয়েছে। কারণ বৃটিশদের শাসনামলে কোলকাতা আলিয়া মাদরাসায় পরপর ২৬ জন অমুসলিমকে প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন মুসলিম দেশ এবং শাসকরা ও মুসলমান । ৯২ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু প্রিন্সিপাল কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। হিন্দু তো দুরের কথা সুযোগ্য আলেম ব্যতিত মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদে কোন মসলিম শিক্ষককেও নিয়োগ দেয়া উচিত হবে না। এটা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে চরম ধৃষ্টতা এবং কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বেয়াদবির শামিল।
এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে একটি কুচক্রী মহল মুুসলমানদের উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিস্ট মহলের প্রতি আহবান জানান তারা।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ : টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার ও মো. আনোয়ার হোসেন আবুড়ি এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বেনিয়া ইংরেজ কর্তৃক রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর লাখেরাজ সম্পত্তি কেঁড়ে নিয়ে তা ইংরেজদের অনুগত হিন্দু জমিদারদের নিকট হস্তান্তর কর হয়। যাতে ১৭৬৫ সালের পর বেশির ভাগ মাদরাসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মুঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি মুসলমানদের মাদরাসা নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে তারা মাদরাসায় খ্রিষ্টান প্রিন্সিপাল নিয়োগ করতো। ফলাফল হিসাবে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে মুসলমানরা রাজার জাতি থেকে ভিখারির জাতিতে পরিণত হয়। আর ইংরেজরা তাদের ক্ষমতা ২০০বছর দীর্ঘায়িত করে শাসন, শোষণ ও লুটপাট চালাতে সক্ষম হয়েছিল। টাঙ্গাইলের দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু প্রিন্সিপাল নিয়োগ ঐতিহাসিক এই সত্যকে আবারো নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। অতি উৎসাহী কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তার কাণ্ড-জ্ঞানশূন্য এ সিদ্ধান্ত বিশেষ কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই অতি উৎসাহী শ্রেণিকে চিহ্নিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা হলে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে ঢাল বানিয়ে ভবিষ্যতে এরা মসজিদ,মন্দির,গির্জা,প্যাগোডা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদের জন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিয়োগের মত অবাস্তব সুপারিশ করে বসতে পারে। এ ঘটনায় সরকারের ভাবমর্যাদা চরম ভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা শায়খ যিয়া উদ্দীন,সহ-সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী,মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া বিবৃতিতে বলেছেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী কাউকে দেশের একটি কমিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি শুধু অসাবধানতা কিংবা অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি শব্দ দ্বারা এড়িয়ে গেলে চলবে না। বরং এটি ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করার চক্রান্ত। নেতৃবৃন্দ আরো বলেছেন, এ রকম অনৈতিক নিয়োগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে থাকবে। তাই সরকারকে এ সকল অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফান্দাউক দরবার শরীফ : মাধবপুর (হবিগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ মাওলানা মুফতি শাহ্ সুফী সৈয়দ ছালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনি ও ফান্দাউক দরবার শরীফের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আলহাজ মাওলানা শাহ্ সুফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনি পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, মাদরাসায় হিন্দু ধর্মের বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব প্রদানে আমরা ভীষণ ভাবে উদ্বিগ্ন ও নিন্দা জানাই। ‘আশা করছি বিষয়টি আশু সমাধান ও মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে নীতিমালা পরিবর্তন ও অন্যান্য নথিপত্র সংশোধনপূর্বক স্থায়ী সমাধানের লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন’।
জাতীয় শিক্ষক ফোরাম : জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান এক বিবৃতিতে বলেন, টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিয়োগ করে ইসলামধর্ম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এটা মুসলমানের সাথে তামাশার শামিল। এধরণের ঘটনা দেশের কোটি কোটি মুসলমানদের হৃদয়ে চরম আঘাত। দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসায় হিন্দু অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নেতৃদ্বয়, এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জোর দাবি জানান। ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও সেক্রেটারী মুহাম্মদ আব্দুল আঊয়াল মজুমদার এক যুক্ত বিবৃতিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিয়োগ করে মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে। এধরনের ঘটনাকে কোনভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এটা পরিকল্পিত ঘটনা। ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী ইসলাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অংশ। এ ঘটানার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ : হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. মোস্তফা খান ও মহাসচিব মাওলানা আনোয়ার হোসাইন। এক বিবৃতিতে বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব প্রদানের ঘটনায় গোটা মুসলিম সমাজ ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।
জৈনপুরী পীর সাহেব : আল্লামা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী পীর সাহেব এক বিবৃতিতে বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, আর মাদরাসাহ নবিজী (সা.) এর ঘর। এই দুইটি ঘরের ধারক, বাহক হবেন মুমিন মুসলমান। সর্বজন জ্ঞাত, আল্লাহর ঘর কাবা শরীফ মক্কায় ও মসজিদে নববী (সা.) মদীনায় অবস্থিত। এই উভয় স্থানে নেতৃত্ব দেয়া তো দূরের কথা বিধর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করাও নিষিদ্ধ। অথচ আজ বাংলাদেশে ধর্মিয় শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ একটি কামিল মাদরাসার প্রধান কী করে বিধর্মী হতে পারে? এটা কিছুতেই বোধগম্য নয়। ইহা ইসলাম ও পবিত্র ধর্মীয় শিক্ষা ও নবিজীর ঘরের অবমাননা ও হেয়প্রতিপন্ন করা ছাড়া আর কিছুই না। এহেন হীন ও অবাঞ্ছনীয় পদক্ষেপ যারা নিয়েছেন তারা অতিসত্তর এই ভুল সিদ্ধান্ত বর্জন করে সঠিক পথে ফিরে আসুন! যদি কোনো নীতিমালা বা ধারা তৈরি করা হয়ে থাকে তা বাতিল করুন। অন্যথায় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় রাসূল (সা.) আপনাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং এই দেশের ঈমানদার জনগণ আপনাদেরকে ছাড় দিবেন না।
জাতীয় ইমাম সমাজ : জাতীয় ইমাম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসাইন আল ফিরোজী এক বিবৃতিতে বলেন, মুসলিম বিদ্বেষী চক্র দেশকে রামবাজ্য বানানোর অশুভ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশে জাতিগত দাঙ্গা বাধিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায় তারাই টাঙ্গাইলের মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিয়েছে। অবিলম্বে এ ঘটানার সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন