শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ফারইস্টের নজরুল-খালেককে গ্রেফতার দেখাচ্ছে দুদক

সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অর্থ আত্মসাতের দুই মামলায় ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম এবং পরিচালক এ এম খালেককে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ আবেদন জানানো হয়।

এর আগে বিভিন্ন ভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলায় (নং-১৫) গত ১২ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, তৎকালীন পরিচালক এম এ খালেক, খালেক পুত্র রুবাইয়াত খালেদতে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ঢাকার চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে এম এ খালেক এবং তার পুত্রকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মো. নজরুল ইসলামকে রিমান্ডে এনে ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন দেন আদালত। এর পরপরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ৮ মার্চ দায়েরকৃত পৃথক ২টি মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিসহ ৯ জনকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানায়। সংস্থার পরিচালক মো. বেনজির আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দুদক সূত্র জানায়, গ্রাহকের ৭০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ মার্চ ২টি মামলা করে দুদক। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া আরও অন্তত ১৩০০ কোটি টাকার হদিস নেই। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেন। এজাহারে আরো বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: ও (এফআইএলআইসিএল)র ১৫৮তম পরিষদ সভার কার্য বিবরণীর ভুয়া সার-সংক্ষেপ জাল করে এটির বরাত দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি:’র ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার, মতিঝিলে ‘এফআইএলআইসিএল’র নামে রক্ষিত ২২টি এমটিডিআর জামানত রাখে। আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পিএফআই প্রপার্টিজ লি: কে ৪০ কোটি টাকার ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহকদের ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টাকা আত্মসাৎ করেন। যা ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযাগ্য অপরাধ। মামলাটির আসামির তালিকায় রযেছেন, প্রতিষ্ঠানটির ভেঙে দেয়া পরিচালনা পরিষদেও চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, তৎকালীন পরিচালক কে এম খালেদ, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খালেদ, পরিচালক এম. এ. খালেক, পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, পরিচালক ফরিদউদ্দিন এফসিএ, পরিচালক আসাদ খান, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ এবং বরখাস্তকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্যাহ। মামলাটি তদন্ত করছেন সংস্থার সহকারী পরিচালক শারিকা ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক বায়েজিদুর রহমান। তদন্তের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন পরিচালক বেনজির আহমেদ। দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত আরেকটি আত্মসাৎ মামলায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তদন্তের স্বার্থে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা মো. নজরুল ইসলাম এবং এম. এ. খালেককে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. হেমায়েত উল্যাহসহ অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত কর্মকর্তারা প্রয়োজন মনে করলে গ্রেফতার দেখানোদের রিমান্ডের আবেদনও জানাতে পারেন।

এদিকে শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত অর্থ আত্মসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. হেমায়েত উল্যাহসহ আরও ১১ আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এজারহারভুক্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১১ সালের ১ জুলাই তেকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক পরিচালক এমএ খালেক এবং সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে অন্যান্য আসামিদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে এ অর্থ আত্মসাৎ করেন। আত্মসাতকৃত অর্থ নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির যোগসাজশে প্রতারণামূলক বিনিয়োগ করেন। কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করেন। এমএ খালেক এবং মো:নজরুল ইসলাম নিযুক্ত ৭-৮ জন পরিচালক ছিলেন। কোম্পানির নামে জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণ, অর্থ বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়, প্রিন্টিং এবং বিভিন্ন টেন্ডারসহ সবকিছু ১ ও ২ নম্বর আসামির দ্বৈত সিদ্ধান্তে করতেন। এম এ খালেক সিদ্ধান্ত নিতেন। মো. নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় অন্য আসামিদের কাজে লাগাতেন। কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক, শেয়ার হোল্ডার পরিচালক, অডিট কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির চেয়ারম্যান সবকিছুই এ এম খালেকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এমনকি দীর্ঘ সময় (২০০৭ সাল থেকে ২০১৩) সাল পর্যন্ত তিনি নিজেই পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
যেসব আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে তারা হলেন, পরিচালক এমএ খালেকের আরেক পুত্র শারিয়ার খালেদ, ফারইস্টের সাবেক পরিচালক মো. তানভিরুল হক, নূর মোহাম্মদ ডিকন, একরামুল আমিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন, মো. আলমগীর কবির, তৎকালীন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরবর্তীতে প্রধান নির্বাহী) মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ, মো. কামরুল হাসান খান, প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ এফ অ্যাণ্ড এ. শেখ আব্দুর রাজ্জাক, তৎকালীন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: কামাল হোসেন হাওলাদার এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (হেড অব ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্ট) মোহাম্মদ মাকবুল এলাহী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Humaun Kabir Biswas ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩২ এএম says : 0
ভূয়া কথা এরা নয় মালিক আত্নসাত করেছে
Total Reply(0)
Saiful Alam Chowdhury ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
এদের কিন্তু জেল জরিমানা হবে না। বিএনপি-জামাত করলে তখন জেল-জরিমানা
Total Reply(0)
Abdur Rahman ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
দেশটা চোরদের স্বর্গরাজ্য। চোরদের বিচার না হওয়াতে এরা সাহস পেয়েছে। আইনের আওতায় এনে এদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হউক।
Total Reply(0)
Engr Amir Hamja ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
অন্যায় করলে সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটতেছে
Total Reply(0)
মোঃ বাতেনুর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:১৪ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ দুনিয়তেই এদেরকে সব শাস্তি দিয়ে দিওনা, কিয়ামতের দিনের জন্য কিছুটা বাকি রেখ। আমাদেরকে তারা পেটে লথি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে, আমরা তাদের লাঞ্চনা নিজের চোখে দেখতে চাই।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন