রাজধানীতে প্রতিদিনই চলছে নতুন নতুন বাড়ি নির্মাণ কাজ। এ কাজে ব্যবহার করা হয় ইট, বালি, রড, সিমেন্ট ইত্যাদি। নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক, ভ্যান বা লরি আবৃত বা ঢেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু তা করা হয়না। ট্রাক, ভ্যান বা লরিতে করে এসব নির্মাণসামগ্রী এন রাখা হয় রাস্তার উপর। আর রাস্তার উপর রেখেই চলে ভবন তৈরির নির্মাণ কাজ। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা সব ধরণের ভবন নির্মাণের সময় নির্মাণ সামগ্রীগুলো রাখা হচ্ছে নগরবাসীর চলাচলের রাস্তার উপর।
রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার কারণে জনসাধারণকে চলতে গিয়ে পরতে হচ্ছে বিপাকে। বিভিন্ন রাস্তায় ভবনের নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। যানজট-দুর্ঘটনাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র ইট-পাথর-বালু ফেলে রাখছেন ভবন মালিকরা। আইন অনুযায়ী রাস্তায় ইট, বালু ও পাথরসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রাখা বেআইনি। কিন্তু তারপরও এ বিধান কেউ মানছেন না।
রাস্তা, ড্রেন, ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, মেরামত বা সংস্কার কাজ পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে বিধিতে বলা হয়েছে। নির্মাণ সাইটে যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনি স্থাপনসহ নির্মাণাধীন ভবন ঢেকে রাখতে হবে। সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী আবৃত বা ঢেকে রাখতে হবে। রাস্তা বা ফুটপাথে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখলে কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে এমন বিধান থাকলেও কেউ মানছেন না কোন নিয়ম।
নগরবাসী বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও ফুটপাথ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ সামগ্রী রেখে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। শুধু তাই নয়, মাঝে-মধ্যে এ কারণে ফাঁকা রাস্তায় প্রায়াই যানজট লেগেই থাকে। দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়তই।
এদিকে, সড়ক ও ফুটপাথে অবৈধভাবে রাখা নির্মাণসামগ্রী জব্দ করে সেগুলো তাৎক্ষণিক উন্মুক্ত নিলামে বিক্রি করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গতকাল শনিবার মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় ডেঙ্গু বিরোধী সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে গিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম দেখতে পান সেখানে প্রধান সড়কে ও ফুটপাথে বিপুল পরিমাণ রড, ইট, বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী অবৈধভাবে রেখে দেয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনের কর্তৃপক্ষকে না পেয়ে ডিএনসিসি মেয়র সড়কে ও ফুটপাথে নির্মাণসামগ্রী রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করায় তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারসিয়া সুলতানা প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্বে ফুটপাথ ও সড়কে অবৈধভাবে রাখা সকল নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করে উন্মুক্ত নিলামের ডাক দেয়া হয়। নির্মাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণ রড, ইট, বালু ও অন্যান্য সামগ্রী। জনসাধারণের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় জনসম্মুখে উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে নিলামে জব্দকৃত সকল মালামাল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভার সন্ধানে অভিযানে এসে দেখি বিপুল পরিমাণ রড, ইট, বালু ও অন্যান্য সামগ্রী রাস্তার ওপর ও ফুটপাথে রেখে দেয়া হয়েছে। বালুর কারণে ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে গেছে। রাস্তায় পানি জমে রয়েছে। জনগণের চলাচল বাধাগ্রস্ত করে ফুটপাথ ও রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী রাখা যাবে না। সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সরকারি ভবন নির্মাণ প্রকল্প বলেই আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। জনগণের দুর্ভোগ যেন না হয়, পানি জমে এডিসের লার্ভা যেন না জন্মায় এগুলো বিশেষ নজর রাখতে হবে। শুধু মিরপুরে নয়, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলেই আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কিছুতেই জনগণের ভোগান্তি হতে দেয়া যাবে না।
ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণের সচেতনতা জরুরি। এ বছর বর্ষার শুরু থেকেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। বিগত সময়ের তুলনায় ডেঙ্গুকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। জনগণের সচেতনতা ও সহযোগিতা পেলে ডেঙ্গুকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। স্বচ্ছ পানি জমতে দেয়া যাবে না। বাসা বাড়ি, বারান্দা ও ছাদ বাগান নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
ইতোমধ্যে ডিএনসিসি এলাকার ছাদবাগানের ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরে কৃষি অধিদফতরের সহায়তায় ডিএনসিসি ছাদবাগান বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে বলেও জানান ডিএনসিসি মেয়র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন