ইউক্রেন অভিযানে সম্প্রতি কৌশল বদল করেছে রুশ সেনা। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও খরচ কমাতে বিশাল ডনবাস এলাকার কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে রাশিয়া তার সেনাদের প্রত্যাহার করেছে। ফলে জায়গাগুলো পুনরায় দখল করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা। বদলে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিরাপত্তা জোড়দার করতে সেসব জায়গায় সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। পাশাপাশি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে আবার হামলা শুরু করেছে তারা।
বর্তমানে পুতিনের বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ডনবাস অঞ্চলের সমস্ত খনিজ সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তারা ডোনেৎস্ক বিমানবন্দরের কাছে পিস্কি গ্রাম দখল করা ছাড়াও ডনবাসের দক্ষিণ-পূর্বে বেশকিছু সাফল্য পেয়েছে। শনিবার সকাল থেকে রুশবাহিনী বাখমুত শহরের দিকে গুলিবর্ষণ করে এগোতে থাকে। সঙ্গে রয়েছে রকেট ও মর্টারশেল নিক্ষেপ। ধারণা করা হচ্ছে, শহরটির খুব কাছে পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা।
যুদ্ধের আগে বাখমুত শহরের জনসংখ্যা ছিল ৭০ হাজার। শহরটি খনিজ সম্পদে ভরপুর ডনবাস অঞ্চল দখলের লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই মাসের শুরুতে যখন রুশবাহিনী শিল্প শহর লিসিচানস্ক দখল ও লুহানস্কে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন থেকেই তাদের ধীরগতির আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বাখমুত। গত সপ্তাহে উত্তর-পূর্বে রুশ সেনাদের পিছু হটার পরও বাখমুতে আক্রমণ জারি রয়েছে।
ইউক্রেনীয় সেনা ও কমান্ডাররা মনে করছেন, রুশবাহিনীর আক্রমণের জন্য বাখমুত ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কারণ রুশ সেনারা পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ইউক্রেনের রসদ সরবাহ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। রণক্ষেত্রে থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা বলছেন, বাখমুতের আশেপাশে মোতায়েনকৃত রুশ সেনাদের বেশিরভাগ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের। এই সংস্থাটি ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ এবং সিরিয়া ও লিবিয়ায় যুদ্ধ করেছে।
সামরিক অচলাবস্থার দিকে ইউরোপকে ঠেলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়াকে দুর্বল করা এবং বেলারুশকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়ার সাথে সশস্ত্র সংঘাতের দিকে ইউরোপকে ঠেলে দিচ্ছে। শনিবার দেশপ্রেমিক ফোরামে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার সাথে একটি সামরিক সংঘর্ষে ইউরোপকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা তাদের এ পরিকল্পনার কোন গোপনীয়তা রাখে না। আগামী বছরের জন্য চুক্তিগুলি সম্পন্ন করা হয়েছিল। লক্ষ্য রাশিয়াকে দুর্বল করা এবং বেলারুশকে ধ্বংস করা,’ বলেছেন লুকাশেঙ্কো। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ‘ইউক্রেনকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে।’
‘ইউক্রেনের পতন ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পোলিশ, লিথুয়ানিয়ান এবং লাটভিয়ান রাজনীতিবিদরা স্পষ্টতই, নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাদের ভবিষ্যতের জন্য দর কষাকষির আশা করছেন,’ লুকাশেঙ্কো বলেন। এটি করার মাধ্যমে, তিনি জোর দিয়েছিলেন, তারা গত শতাব্দীর ৩০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ৪০ এর দশকের প্রথম দিকের করা ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে। ‘আপনার কি মনে আছে সেই দিনগুলি যখন সবাই ফ্যাসিবাদী জার্মানি এবং হিটলারের জুতা পরিস্কার করছিল? পোল্যান্ডের নেতৃত্ব অন্য যে কোনও ব্যক্তির চেয়ে এ কাজে আরও বেশি উৎসাহী ছিল। এবং এর ফলে কী হয়েছিল? সেপ্টেম্বরের শুরুতে, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে, পোল্যান্ডের অস্তিত্ব বন্ধ হয়ে যায়, এটা দুঃখের বিষয় যে আমাদের প্রতিবেশীরা ইতিহাসের পাঠ শিখেনি,’ বলেছেন লুকাশেঙ্কো।
খেরসনে স্কুল ও আবাসিক ভবনে হামলা ইউক্রেনীয় সেনাদের : ইউক্রেনীয় সৈন্যরা খেরসন অঞ্চলের নোভায়া কাখোভকা শহরে বোমা বর্ষন করছে। সেখানকার বিমান প্রতিরক্ষা সক্রিয় করা হয়েছে। নোভায়া কাখোভকার সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন রোববার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন। ‘মস্কোর সময় সকাল ১১:০৪ মিনিটে, নোভায়া কাখোভকায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে,’ প্রশাসন ব্লগ করেছে। এর আগে শহরে বিমান সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ২৮ আগস্ট থেকে নোভায়া কাখোভকা সহ খেরসন অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বসতিতে গোলাবর্ষণ করছে। এতে স্কুল ও সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারসন সেন্টারে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের হামলায় তিনজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে। পরে হাসপাতালে এক মহিলা রোগীর মৃত্যু হয়। সূত্র : তাস, আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন