স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের করা দু’টি আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার সময় পেছানো হয়েছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালতে এসব বিষয়ে আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারক ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকা চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁইয়া ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছেন।
বাবুল আক্তারের দুটি আবেদনের মধ্যে একটি হচ্ছে- রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার বনজ কুমার মজুমদারসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন। অপরটি হচ্ছে, ফেনী জেলা কারাগারে বন্দি বাবুল আক্তারের কক্ষে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তল্লাশির অভিযোগ তদন্ত ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার আবেদন। মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা দীপেন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার শুনানি আগেই শেষ হয়েছে। এটি আদেশের জন্য অপেক্ষমান। পৃথকভাবে করা আরেকটি আবেদন আদালত ওই মামলার আবেদনের সঙ্গে নথিভুক্ত করে একসঙ্গে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদারসহ ৬ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার আবেদন করেন। বাবুল আক্তার এখন কারাবন্দি থাকায় মামলার আবেদনে স্বাক্ষর করতে পারেননি। তার পক্ষে আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আবেদনটি আদালতে দাখিল করেন।
মামলার আবেদনে আরও যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. নাজমুল হাসান, মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক বর্তমানে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা ও বর্তমানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম এবং পিবিআইয়ের জেলা পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির।
এরপর ১২ সেপ্টেম্বর একই আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে তার আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ আরেকটি আবেদন দাখিল করে অভিযোগ করেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরেও ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ফেনী কারাগারে প্রবেশ করে বাবুল আক্তারের কক্ষে দীর্ঘসময় ধরে তল্লাশি চালান। হেফাজতে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে বাবুল আক্তার যে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন, তাদের নির্দেশে ও প্ররোচনায় এ তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে বাবুলের অভিযোগ। বাবুলের দাবি, তার জীবনের ক্ষতিসাধন ও মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য ওসি কারাগারে প্রবেশ করেন। আবেদনে ওসি’র প্রবেশের তদন্ত এবং বাবুলের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফেনীর জেল সুপারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়।
বাবুলের এই আবেদনের পরদিন অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় নাগরিক এক নারীর সঙ্গে বাবুলের পরকীয়ার জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার স্ত্রীকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন