বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেতাকর্মীদের ‘শুয়োরের বাচ্চা’ গালি আ.লীগ নেতা হুমায়ুন কবিরের

লালবাগ থানা আ.লীগের সম্মেলনে হট্টগোল-হাতাহাতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই ডায়াসে মাইক নেয়াকে কেন্দ্র করে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হট্টগোলে জড়িয়ে পড়েন মহানগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা ও কাউন্সিলর। এছাড়া সম্মেলন চলাকালে পুরো সময়ই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল। সম্মেলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মোট পাঁচ দফায় হাতাহাতি-মারামারি হয়েছে। মাইকে বারবার নির্দেশ দেওয়া হলেও থামেনি বিশৃঙ্খলা। বক্তব্য দিতে উঠে বিশৃঙ্খলা দেখে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ হুমায়ুন কবির। এ সময় বিশৃঙ্খলা থামাতে নেতাকর্মীদের ‘শুয়রের বাচ্চা’ বলে গালি দেন হুমায়ুন কবির। লালবাগ হুমায়ুন কবিরের নিজ থানা। গতকাল রাজধানীর লালবাগের নবাবগঞ্জ পার্কে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, সম্মেলনে নেতাদের নামে সেøাগান দেওয়া নিয়ে হট্টগোল ও বাকবিণ্ডতা শুরু হয়। কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, হাজী সেলিমের ছেলে সোলায়মান সেলিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা মহানরগ দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় হাতাহাতি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে। সোলায়মান সেলিমের কর্মীরা মানিকের সাথে ওই ঘটনার পর সবাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস বিরোধী সেøাগান দেন। আনিস এ সময় স্টেজে ছিলেন। আনিস মাইকে সোলায়মান সেলিমকে উদ্দেশ করে বলেন, সোলায়মান সেলিম মাস্তানি করবেন না। আপনার চেয়ে বড় মাস্তান মঞ্চে আছে। সেøাগানধারী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ঘরে থাকতে দেওয়া হবে না। ঘুমাতে দেওয়া হবে না।
এক পর্যায়ের মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইক নিয়ে সেøাগানধারীদের উদ্দেশে করে গালি দিয়ে বলেন, ‘এই শুয়োরের বাচ্চারা, তোরা থাম। সেøাগান বন্ধ কর।’
পরবর্তীতে প্রধান অতিথির বক্তেব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, লাফালাফি, বাড়াবাড়ি করবেন না। নির্বাচনের ১৪ মাস বাকি, অথচ শোডাউন দিয়ে শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছেন। আপনারা কেউ সংসদ সদস্য (এমপি) হতে পারবেন না, নেতা হতে পারবেন না।
সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাংগঠনিক গোলাম আশরাফ তালুকদার, গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ।
জানা গেছে, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস ও হাসিবুর রহমান মানিক প্রকাশ্য বাগি¦তণ্ডায় লিপ্ত হন। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই সম্মেলনস্থলে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন লালবাগ থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণের ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। এ সময় ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য আনিসুর রহমান আনিস ডায়াসে এসে হাসিবুর রহমান মানিককে ধমক দিয়ে সরে যেতে বলেন। তিনি মাইক ছেড়ে দিলে সভাস্থলে তার কর্মীরা চিৎকার চেচামেচি করে আনিসবিরোধী সেøাগান দিতে থাকেন।
মুহূর্তেই মানিক সমর্থকরা আনিসকে স্টেজ থেকে বিতাড়িত করতে তেড়ে যান। পরে পুলিশ ও মহানগরের কয়েকজন নেতা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মানিক সমর্থকরা তখনও স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আনিসবিরোধী সেøাগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মাইক ছেড়ে স্টেজের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান কাউন্সিলর আনিসুর রহমান আনিস। পরে হাসিবুর রহমান মানিক মাইক হাতে নিলে তার কর্মীরা শান্ত হয়।
পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুরু হলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বক্তব্য দেয়ার মধ্যেই সম্মেলনের মাঠে আবারও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন হাসিবুর রহমান মানিক ও হুমায়ুন কবির সমর্থকরা। এ সময় আব্দুর রাজ্জাক মারামারি থামানোর জন্য নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, মারামারি থামানোর জন্য আহ্বান করছি। বিশৃঙ্খলা করবেন না, বিশৃঙ্খলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। থামুন আপনারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপনাদের মাঝে এসেছে, এর গুরুত্ব উপলব্ধি করুন আপনারা। আবারও আহ্বান করছি, থামুন। এক পর্যায়ে নগর আওয়ামী লীগ নেতারা মঞ্চ থেকে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য ও ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কাউন্সিলর মানিক আমার বন্ধু মানুষ। একসাথে ছাত্রলীগ করেছি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, সম্মেলনের মাঠে সামনে বসাকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য হাজী সেলিম গ্রুপ ও কাউন্সিলর মানিক গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ করেছি। থানা ও ওয়ার্ডের যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের সিভি নিয়ে এসেছি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ইনকিলাবকে বলেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো গ্রুপিং এর জায়গা আছে লালবাগ এর অন্যতম। ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রুপিং এর জায়গা। এখানে বঙ্গবন্ধুর পদচারণা ছিল, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পাশে, আন্দোলন সংগ্রামসহ নানা কারণে লালবাগ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটু সমস্যা হলে তা তেমন বিষয় না।
সেøাগান দেয়াকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের গালাগালি করেছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না না এসব বাজে কথা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আলিফ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৪ এএম says : 0
আ.লীগ এর ধংসের পেছনে এসব নেতাদের ই সব চাইতে বড় হাত থাকবে।
Total Reply(0)
Sonom ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:৩১ পিএম says : 0
শুয়রকে অপমান করার জন্য তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ????
Total Reply(0)
ইকবাল বিন ফিরোজ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৮ এএম says : 0
এই কর্মিদের লজ্জা তাকলে আর এই নেতার ডাকে সাড়া দেবেনা,আর যদি লজ্জা না থাকে.....
Total Reply(0)
আলিফ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৬ এএম says : 0
এই ধরনের মুখের ভাষা কোন নেতার হোতে পারেনা। কর্মীদের সন্তানের মতো আগলে রাখতে হয়। তাহলে প্রকৃত নেতা হওয়া যায়।
Total Reply(0)
আকিব ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৭ এএম says : 0
এরা নিজ দলের নেতা কর্মীদের এই রকম ব্যবহার করলে।সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে।
Total Reply(0)
আলিফ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৩:৪৫ এএম says : 0
জনগনের কাছে তো জবাবদিহিতা নাই-ই, নিজ দলের নেতা কর্মীদের কাছেও কোন দায়-বদ্ধতা নেই
Total Reply(0)
Md Bishal ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১:২১ এএম says : 0
তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন