অবশেষে তিনি মুখ খুললেন! এই ‘তিনি’ হচ্ছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে দেশে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় দেশ-বিদেশে তোলপাড় চলছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ৬ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শত শত দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ৮৬ জন গুমের তালিকা জাতিসংঘে দেয়া হয়েছে। গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় একের পর এক মানববন্ধন করছেন। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাসলেট ঢাকা সফরে এসে সবার সঙ্গে কথা বলে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি রাজপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগ না করার পরামর্শ দিয়ে গেছেন। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে খবর প্রচার হচ্ছে। অথচ তিনি ঘুমিয়েই ছিলেন। এসব নিয়ে তিনি কোনো প্রতিবাদ, তদন্তের দাবি বা সরকারকে কোনো পরামর্শ দেননি। এমনকি মিশেল ব্যাসটেল ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে বৈঠক করলেও সেখানে তিনি (নাসিমা বেগম) যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদের সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে এতোদিন জেগে জেগে ঘুমিয়েছেন। তবে গতকাল তিনি মুখ খুলেছেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো সরকারকে খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা আগেও বলেছি কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা হোক। কমিশন যদি নিজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ণ তদন্ত করতে পারে, সেক্ষেত্রে হয়তো পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।
নাছিমা বেগম বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চেয়ারপারসন যখন এসেছিলেন, আমরা কমিশনের সদস্যরা তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। উনি আমাদের কার্যক্রমগুলো দেখেছেন। আমাদের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে। আমরাও মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে সেগুলো সরকারকে খতিয়ে দেখা উচিত।
পৃথক কমিশন গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, কমিশন করা হলে আবার আপনারাই বলবেন কার দ্বারা কীভাবে হয়েছে।
গুমের বিষয়ে নাছিমা বেগম বলেন, আমাদের কাছে ১১৯টি গুমের অভিযোগ এসেছে। এরমধ্য থেকে ফেরত এসেছেন ২৮ জন, ৩৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে সরাসরি ৬২টি অভিযোগ করা হয়েছে। ৪৮টি অভিযোগ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। আর আমরা নিজেরা গণমাধ্যমে দেখে ৯টি অভিযোগ নিয়েছি। আমাদের কাছে সরাসরি ৬২টি অভিযোগ যারা করেছেন তাদের অনেকেই পরে আর যোগাযোগ করেননি। আমাদের এখান থেকে যখন তারিখ দেওয়া হয় এবং কথা বলা হয়, তখন অনেকে বলেন ফেরত আসছে। অনেকের আগ্রহ নেই, অনেকে ফোনও ধরেন না। এরকম একটি অবস্থা। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে বিষয়গুলো নিয়ে কমিশন এগুতে পারেনি। এরমধ্যে এমনও হয়েছে শুধু পত্রিকার কাটিং দিয়ে রেখেছে সংগঠনগুলো, কোনো যোগাযোগের সুযোগ নেই।
সভায় মানবাধিকারকর্মী, বিভিন্ন সংস্থার সদস্য, মানবাধিকার কমিশনের সদস্যসহ কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন