শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রতারণার শিকার এমপি-পুলিশ হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা

ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়ি ব্যবসার ফাঁদ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বছর দশেক আগে ঢাকায় এসে চালাতেন গাড়ি জাকির হোসেন (৪৩)। তার গাড়ি ব্যবসার ফাঁদে পা দিয়ে কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন এমপি-পুলিশসহ তিন শতাধিক মানুষ। প্রতারণার এই টাকা দিয়ে জাকির হোসেন নিজে কিনেছেন গাড়ি, বাড়ি, জমি, ছেলেকে পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। মনোনয়ন পেতে প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে দিয়েছেন প্রাডো গাড়ি। গত বুধবার রাতে কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানা এলাকা তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার আড়ালে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকির। দুই-তিন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। জাকিরের প্রতারণার মধ্যে অন্যতম হলো স্বল্পমূল্যে গাড়ির ব্যবসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়া। রেন্ট-এ-কারে মাসিক ৬০-৭০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার কথা বলে ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কারও টাকা কারও গাড়ি হাতিয়ে নেন তিনি। গত কয়েকদিনে ডিবি কার্যালয়ে দুই শতাধিক ভুক্তভোগী ভিড় করেন। আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারলাম, শুধু মুন্সীগঞ্জের একটি গ্রাম থেকেই প্রায় দেড়শ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাকির।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, তার গাড়ি ২০-২৫টি। সেসব গাড়িই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে দেখাতেন। জাকির কয়েকজন এমপি ও প্রশাসনের লোকদের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। তবে তাদের কাছে নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে মাসিক কিস্তির টাকা ঠিকই পরিশোধ করেন। প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে ও রাজধানীর মুগদা থানায় এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের তেজগাঁও আঞ্চলিক দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারক জাকির চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির স্বীকার করেন যে, প্রতারণার টাকায় তিনি তার গ্রামে আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেতে একজনকে প্রাডো গাড়ি দিয়েছেন। নির্বাচনে বিপুল টাকা খরচ করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। ঢাকাতে তিনি ফ্ল্যাট-প্লট ও গাড়ি কিনেছেন। এছাড়া প্রতারণার টাকায় তিনি ছেলেকে আমেরিকায় পাঠিয়েছেন। আগামী নভেম্বরে তারও আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। আমরা রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেয়ার চেষ্টা করা হবে। আর না হয় তার সম্পদ জব্দের জন্য প্রয়োজনে সিআইডিতে মামলা হস্তান্তর করা হবে। আমরা এর আগেও তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকে বলেছিলেন, তাকে গ্রেফতার করা হলে ভুক্তভোগীরা মাসিক কিস্তির টাকা পাবেন না।
তার প্রতারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, জাকির চেয়ারম্যান পোর্ট থেকে স্বল্প দামে গাড়ি কিনে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেন। ক্রয় করা গাড়ি রেন্ট-এ -কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনা করতে একই গাড়ি দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে চুক্তি করতেন। একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর সম্বলিত গাড়ি একাধিক জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করতেন জাকির। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে শুধু ইঞ্জিন নম্বর দিয়েই মাসিক কিস্তি পরিশোধের ভিত্তিতে চুক্তি করতেন। কিছুদিন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করার পর কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে দিতেন। এভাবে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। এছাড়া তিনি আগের বিক্রি করা গাড়ি স্বল্পমূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, জাকির চেয়ারম্যান ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে ডাউন পেমেন্টে গাড়ি কিনতেন। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে ক্রেতাকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে লোন নিতেন। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় ৩০০ ভিকটিমের সঙ্গে সে এমন প্রতারণা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন