বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় রহস্যজনক নিখোঁজ গৃহবধূ ফরিদপুরে উদ্ধার

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

খুলনার বণিকপাড়া থেকে প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ রহিমা খাতুনকে গত শনিবার রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের পর তিনি দাবি করেছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে সমগ্র বিষয়টি খুবই রহস্যজনক বলছে পিবিআই। উদ্ধারের পর তার কাছ থেকে পাওয়া একটি ব্যাগে ব্যবহারের কাপড়সহ অন্যান্য সামগ্রী বলছে তিনি স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশীদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে তাদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটানো হতে পারে। এদিকে, উদ্ধারের পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক সারওয়ার আহমেদ রহিমা বেগমকে কন্যা আদুরী বেগমের জিম্মায় দেন। এর আগে রহিমা বেগম খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো. আল আমিনের খাস কামরায় ২২ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব বাংলাদেশ (পিবিআই) খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, গত শনিবার রাতে ফরিপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। সে সময় তিনি ওই বাড়ির সদস্যদের সাথে গল্পগুজব করছিলেন। ওই রাতেই তাকে খুলনা আনা হয়। উদ্ধারের পর থেকে কোনো কথাই বলছিলেন না রহিমা বেগম। গতকাল রোববার বেলা ১টার দিকে মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ তাকে চার মেয়ের মুখোমুখি আনা হয়। এসময় রহিমা বেগম অপহৃত হয়েছিলেন বলে দাবি করে বলেন, ৪ থেকে ৫ জন তাকে অপহরণের পর এক হাজার টাকা দিয়ে অজ্ঞাত স্থানে তাকে ছেড়ে দেয়।
রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে গোপালগঞ্জের মোকছেদপুর হয়ে ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান। কুদ্দুস মোল্লা রহিমা বেগমের বাড়ির এক সময়ের ভাড়াটিয়া। তার কাছে কোনো মোবাইল নম্বর না থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছি। এদিকে, কুদ্দুস মোল্লার ভাগ্নে জয়নাল খান বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম নামের ওই নারী পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে মামার (কুদ্দুস মোল্লা) বাড়িতে এসে থাকতে চান। এরপর গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ইউটিউবে ওই নারীর ছবিসহ নিখোঁজ হওয়ার একটি সংবাদ দেখি। বিষয়টি মামাতো ভাই আল আমিনকে (কুদ্দুস মোল্লার ছোট ছেলে) জানালে সে রহিমা বেগমের বড় ছেলে মিরাজের মোবাইল ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন ধরেন তার স্ত্রী। তিনি বিরক্ত প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে আর ফোন দিতে নিষেধ করেন। পরে বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেনকে জানাই। তিনি খুলনার পুলিশ কমিশনারকে জানালে গত শনিবার রাতে খুলনা থেকে একদল পুলিশ এসে রহিমা বেগমকে নিয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা। রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের পর মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় তার মেয়ে আদুরী আখতার অপহরণ মামলা করেন। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।
এ মামলায় এ পর্যন্ত ৬ জন আটক হয়েছেন। তারা হলেন- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং একই সাথে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন। রহিমা খাতুনের সাথে জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ ও মামলা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন