শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আরো একটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখে বিশ্ব?

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

আরো একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে এই বছর। গত সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) প্রধান থেকে শুরু করে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান পর্যন্ত প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞদের পরিসংখ্যান বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনা সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বুধবার সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় ২২ জন নেতৃস্থানীয় বেসরকারী এবং সরকারী খাতের অর্থনীতিবিদ বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, ২০২৩ সালে আরও একটি বৈশ্বিক মন্দা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৈশ্বিক মন্দা সম্ভাবনার সমীক্ষার জন্য সুখ্যাত ফ্লোরিডা-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘নেড ডেভিস রিসার্চ’ আগামী বছর বৈশ্বিক মন্দার সম্ভাবনাকে ৯৮.১ শতাংশে উন্নীত করেছে, যা ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারি-সম্পর্কিত মন্দা এবং ২০০৮-২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সঙ্কটের পর সর্বোচ্চ। যখন ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের কঠোর মহামারী নীতি এবং নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি সবই অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে ফেলছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার অতি কঠোরভাবে বাড়ানোর বিষয়টি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটির বাকিদের সাথে মন্দার ঘরে প্রবেশের শঙ্কাকে অনেকটাই সত্যে পরিণত করেছে।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল গত সপ্তাহে স্বীকার করেছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানেন না যে তাদের মুদ্রাস্ফীতিকে লাগাম দেওয়ার প্রচেষ্টাটি মন্দার দিকে নিয়ে যাবে কি না, বা মন্দা কতটা তীব্র হবে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক পাও-লিন তিয়েন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যদি ২০২২ সালের শেষ কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি কমার হওয়ার লক্ষণ না যায় এবং ম‚ল্যস্ফীতির ঠেকানোর পদক্ষেপগুলি বাড়তে শুরু করে, তাহলে এটি ২০২২ এর পরেও ২০২৩ সালের বসন্ত পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভকে চড়া হার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে বাধ্য করবে। আমার মতে তখনই অর্থনীতি মন্দার দিকে ঝুঁকে পড়বে।’
তিয়েন বলেন, ‘আমি মনে করি একই ধরনের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, যদি কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি তাদের মুদ্রা রক্ষার জন্য বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতি চড়া এবং ক্রমাগত হার বাড়াতে বাধ্য হয়, তাহলে মন্দা অনিবার্য।’ সোমবার অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) জানিয়েছে যে, ম‚লত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা ঘটায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জার্মানি, ইতালি এবং যুক্তরাজ্য ইউরোপের তিনটি বৃহত্তম অর্থনীতিও পরের বছর দীর্ঘ মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। ওইসিডি ধারনা করছে যে, ২০২৩ সালে ইউরোপ অঞ্চলে মাত্র ০.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে, যা ইঙ্গিত করে যে অঞ্চলটির অনেক অর্থনীতি বছরের বিভিন্ন সময়ে মন্দার সম্মুখীন হবে।

যদিও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক সংকোচন এড়াতে আশা করা হচ্ছে, তবে চীনের ‘শূন্য- কোভিড’ লকডাউন এবং সীমান্ত বিধিনিষেধ এই অঞ্চলে সংকোচন বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে একটি গুরুতর অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক এই অঞ্চলের জন্য তার অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ৩.২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা এপ্রিলের ৫ শতাংশ থেকে কমেছে। সংস্থাটি চীনের জন্য তার পূর্বাভাস প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে ২.৮ শতাংশ করেছে। হংকংয়ের নাটিক্সিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ত্রিন নুয়েন বলেছেন যে, এশিয়ার অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান সুদের হারের ফলে পতন থেকে রেহাই পাবে না, যদিও এই অঞ্চলটি বিপর্যয় নয় বরং শ্লথ গতি আশা করছে। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি এশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমবে। বাণিজ্য চক্রে আরও বেশি উন্মুক্ত অর্থনীতিগুলিতে বাহ্যিক চাহিদা দুর্বল হওয়ার প্রভাব আরও খারাপভাবে অনুভ‚ত হবে, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ান।

নুয়েন বলেন, ‘চীন বাদে দিয়ে উদীয়মান এশিয়ায় আর্থিক অবস্থার কড়াকড়ি বিনিয়োগকে কমিয়ে দেবে। ব্যয় কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, কিন্তু তাও থাকবে, কারণ এগুলো বেশিরভাগই চীন বাদ দিয়ে উদীয়মান এশিয়ায় অপরিহার্য’। ডিউক ইউনিভার্সিটির ফুকা স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ক্যাম্পবেল আর হার্ভে, যিনি মন্দার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য মার্কিন বন্ড বাজারের আচরণ ব্যবহার করার পথপ্রদর্শক, বলেছেন, ‘ফেডারেল ব্যাঙ্কের পদক্ষেপগুলো অর্থনীতিকে সহজেই মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং একটি মন্দা মুদ্রাস্ফীতি কমাতে খুব কার্যকর হবে। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, যদি যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় প্রবেশ করে, তবে এটি সম্ভবত বিশ্বব্যাপী মন্দার দিকে নিয়ে যাবে, বিশেষ করে যেহেতু ইউরোপ ইতিমধ্যেই মন্দার মধ্যে রয়েছে’। সূত্র : আল জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Maruf Ul Azad ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩৩ এএম says : 0
বিএনপির দোয়া কবুল হইছে সারাবিশ্ব এখন শ্রীলঙ্কা হবার পথে
Total Reply(0)
Mohammad Muktar Hossain ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩৪ এএম says : 0
বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাইরে নই
Total Reply(0)
Rahmat Ullah Jibu ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩৪ এএম says : 0
বাংলাদেশ টাকার অভাব নাই। কারন সড়কে ও ফুটপাত চাঁদাবাজি টাকা আর সুইস ব্যাংকে টাকা ২০২২ সালে জে টাকা পাচার হল সেটা আনলে আমাদের সমস্যা হবে না
Total Reply(0)
MD Jabed Hossain ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৩৩ এএম says : 0
যে বয়সে আমরা সবাই সেজদা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি সে-বয়সে অনেক কবরে শুয়ে আছে, তাই সবাই শুকরিয়া আদায় করি, আল্লাহ সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক।???? আমিন
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন