জবাবদিহির আওতায় না আসা পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং আচরণ পরিবর্তন ও তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য। বাংলাদেশে নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত রয়েছে। একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা আশা করছি র্যাবের আচরণ পরিবর্তন হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এসব কথা বলেন। বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ও জার্মান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং এ আয়োজন করে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। র্যাবের সাবেক ডিজি হিসেবে পুলিশের বিদায়ী আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েন। আবার র্যাবের বিদায়ী ডিজি হিসেবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবদুল্লাহ আল-মামুন নতুন আইজিপির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
পিটার হাস বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এটা খুব ভালো সংকেত। আমরা আশা করছি, র্যাবের আচরণের পরিবর্তন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে হবে কি না, তা নির্ভর করছে বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপরে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারছে কি না, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ তাদের মতপ্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে এটি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে, তা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। নির্বাচনের আগে ও পরের ঘটনাও একটি অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংশ, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সহিংসতার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্ব স¤প্রদায় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
পিটার হাস বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) বাংলাদেশের যোগ দেওয়া না-দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। এটা একটি নীতি। এটা বাংলাদেশ কীভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।
পিটার হাস আরও বলেন, বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলো গোপন কিছু নয়। এই লক্ষ্যগুলো স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটেই রয়েছে। এর একটি হচ্ছে- আরো বেশি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ, নিজেদের নিরাপত্তায় আরো বেশি সক্ষম, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতি হুমকি মোকাবেলা করতে পারে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তায় ক্রমবর্ধমানভাবে অবদান রাখতে পারে। আরেকটি হচ্ছে- বাংলাদেশ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা/পরমতসহিষ্ণুতা, সুশাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। সহজ কথায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অন্যান্য শাসনব্যবস্থার তুলনায় মানবাধিকার রক্ষা এবং (দেশের) সমৃদ্ধিশালী হওয়া ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। গণতন্ত্রের অগ্রগতি/প্রসার বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক কারণ বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে । আমি একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই: যুক্তরাষ্ট্র (কখনোই) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয় না। আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক মানদÐ অনুযায়ী একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান যেখানে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের নিজেদের সরকার নির্বাচন করতে পারবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সরকার, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, সবারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের দরকার রয়েছে। যদি তাদের কেউ একজন নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় কিংবা তাদের কেউ একজন যদি অন্যকে তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সা¤প্রতিক রাজনৈতিক বিক্ষোভ ও সমাবেশগুলোতে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা আমাদেরকে এই সত্যটিই মনে করিয়ে দেয়। রাজনৈতিক সহিংসতার পরিবেশে কোনভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বিক্ষোভকারী, রাজনৈতিক দলসমূহ, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রত্যেকের জন্য আইনের শাসনকে সম্মান করা এবং সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, শিক্ষক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন