মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মানবাধিকার আইনে সংবাদপত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমাবেশের অধিকার

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

সংবিধানের ১৩শ’ সংশোধনীর মাধ্যমে আব্রাহাম লিংকন ১৮৬৫ সালে আমেরিকায় দাসপ্রথা রহিত করেন। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাসপ্রথা উচ্ছেদের প্রথম পদক্ষেপ হল ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেস যেখানে কেবল নীতিগতভাবে দাসপ্রথা উচ্ছেদের কথা বলা হয়, কিন্তু এ নীতি বাস্তবায়নের দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়নি। এক্ষেত্রে একটি মন্তব্য প্রনিধানযোগ্য ঃ‘’The Intentions of the Great five were some what less than purely humanitarion; their aims were to restablish the political balance and destroy the growing economic power of spain which thrived on slave trade in latin America! অর্থাৎ বৃহৎ পাঁচটি শক্তির অভিপ্রায় বিশুদ্ধ মানবিকতার চেয়ে অনেকটা কম ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ভারসাম্য পুন:প্রতিষ্ঠা করা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় দাস ব্যবসা করে উন্নতি লাভ করা, স্পেনের বর্দ্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করা।’’ সুতরাং এটি পরিষ্কার হল যে, দাসদেরকে ভালবেসে নয়, বরং বৃহৎ শক্তিগুলো রাজনৈতিক স্বার্থের দাসপ্রথা উচ্ছেদের জন্য এগিয়ে আসে।
হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে এবং তাঁর আগমনের পরও ইসলাম ভিন্ন অপর কোন ব্যবস্থায় যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা হয়নি, যুদ্ধাহতদের প্রতি কেউ সহানুভ‚তি প্রদর্শন করেনি। অবশ্য পাশ্চাত্যের সমাজ ও আইন ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ঊনবিংশ শতকে এবং বিংশ শতকের প্রথম দিকে যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের প্রতি সামান্য নজর দেয়া শুরু হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা যুদ্ধে আহত হয় তাদের জন্য ১৮৬৪ সালের জেনেভা কনভেনশনের মাধ্যমে কিছু নীতি প্রণয়ন করা হয়। ১৮৬৮ সালের সেইন্ট পেটার্সবার্গ ঘোষণার মাধ্যমে কতিপয় বিস্ফোরক ও দাহ্য বুলেটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের স্বার্থে পশ্চিম বিশ্বে আরও যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সেগুলো হল ১৮৯৯ ও ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশন, ১৯৪৯ সালের ১২ আগস্ট জেনেভায় স্বাক্ষরিত ৪টি কনভেনশন ইত্যাদি। কিন্তু এতকিছুর পরও বাস্তবে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? বসনিয়া হার্জেগোভিনা, চেচনিয়া, কাশ্মীরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধবন্দী আর যুদ্ধাহত মুসলিমদের আর্তচিৎকারে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। তাছাড়া শুধু মুসলিম বলে নয় সকল যুদ্ধবন্দী আর যুদ্ধাহতদের প্রতিই এরা বড় নিষ্ঠুর। যুদ্ধবন্দীদের গায়ের চর্বি দিয়ে জার্মানীতে সাবান বানানোর লোমহর্ষক কাহিনী কারও অবিদিত নয়। আসলে যুদ্ধবন্দী ও যুদ্ধাহতদের এরা মানুষই মনে করে না।
নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি যারা সর্বদা অমানবিক আচরণ করত, সেই সকল শক্তিধর রাষ্ট্র তার ধর্ম, ভাষা বা সংস্কৃতির অনুসারী অপর দেশের সংখ্যালঘুদের স্বার্থ উদ্ধারে সবসময় সচেষ্ট থাকত। যা হোক এ রকম পক্ষপাতমূলক আচরণের পথপরিক্রমায় ১৯১৯ সালে ভার্সাই-এ অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে প্রথম সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলা হয়।
পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থায় বিশ শতকের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠিত জাতিপুঞ্জের চুক্তির ২৩নং অনুচ্ছেদে প্রথম শ্রমিকের অধিকারের ব্যাপারে বলা হয়। ১৯১৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা গঠিত হয় যার উদ্দেশ্য হল শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা।
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকারের ধারণা আন্তর্জাতিকীকরণ ঃ এটি প্রায়শ:ই বলা হয়ে থাকে। ‘’The Charter of the United Nations Organistaitons has internationalised the idea of human rights’’ অর্থাৎ জাতিসংঘ সনদ মানবাধিকারের ধারণার আন্তর্জাতিকরণ করেছে।’’ অবশ্য পাশ্চাত্য সমাজে মানবাধিকার আইনের ক্রমবিকাশ আলোচনা করলে যে কেউ এ বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করবেন। কিন্তু আসলে কি তাই? মনাবাধিকারের ধারণার আন্তর্জাতিকীকরণ কি হয়েছে মাত্র সেদিন- ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর কিংবা ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বরে? মুসলিম বিশ্বে মানবাধিকার আইনের ক্রমবিকাশ ভাষা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (সা:) এর অবদান আলোচনা করলে এসবের সদুত্তর পাওয়া যাবে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। তাঁর সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন ঃ “আমি তো তোমাকে বিশ্ব-জগতের কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’’ আর রহমতের নবী। মানব মুক্তির দূূত হযরত মুহাম্মদ (সা:) মানুষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে যখন মানুষের মধ্যে মানবতারোধের কোন বালাই ছিল না, সমস্ত পৃথিবী যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই সময় রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সা:) মানবতাবোধের আলোকবর্তিকা নিয়ে দিশেহারা মানবজাতির নিকট হাজির হন। পাশ্চাত্য সভ্যতা মানবাধিকার সম্বন্ধে বুঝতে শিখেছে এই তো মাত্র সেদিন থেকে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের মানবতাবোধের ধারণাটুকুও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পক্ষপাতমূলকও একপেশে।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) মানবাধিকারের পূণাঙ্গ, চিরন্তন রূপরেখা মানবজাতির সামনে পেশ করেছেন। দিশেহারা, দিগভ্রান্ত, অসহায় নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবজাতির মুক্তিকল্পে তিনি সকল ‘মানুষ’ কে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন যা পৃথিবীতে কখনও হয়নি এবং হবে বলেও আশা করা যাবে না। আল্লাহ প্রদত্ত চিরন্তন জীবন পদ্ধতি ইসলাম তিনি দিশেহারা মানবজাতির সামনে পেশ করেন। ইসলামের মানবাধিকার বলতে সেই সকল অধিকারকে বুঝানো হয় যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের প্রদান করেছেন এবং পৃথিবীর কোন অপশক্তির দ্বারা যেসকল অধিকার কখনও রহিত হয় না, হরন হয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন