প্রবীণ সাংবাদিক তোয়াব খান আর নেই। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হলে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার মেয়ে দেশে ফেরার পর আগামীকাল সোমবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। তোয়াব খানের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সংস্কৃতির সংগঠন থেকে শোক প্রকাশ করা হয়।
তোয়াব খানের ছোট ভাই ওবায়দুল কবির জানান, তোয়াব খানের লাশ সোমবার সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে নেওয়ার পর সেখানে প্রথম জানাজা হবে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কফিন রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর তোয়াব খানের কফিন জাতীয় প্রেসক্লাবে নেয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে লাশ নেওয়া হবে গুলশানের নিজ বাসভবনে। বাদ আছর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজার পর দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক তোয়াব খান ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিক হিসেবে সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন রয়েছে তার। সাংবাদিকতা জীবনের শুরু করেন ১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে তিনি দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক হন। এরপর ১৯৬৪ সালে যোগ দেন দৈনিক পাকিস্তানে। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলা হয়। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। পরে প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি দেশের প্রথম তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভ‚মিকা পালন করেন তোয়াব খান। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিÐির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান।
দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি। একইসঙ্গে একই মালিকানার প্রতিষ্ঠান অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজবাংলা টুয়েন্টি ফোর ডটকমেরও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালে একুশে পদক পান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন