দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল সোনার দাম। অবশ্য কয়েকদিনের মধ্যেই তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কিছুটা বেড়েছে। এর মাধ্যমে প্রতি আউন্স সোনার দাম আবার ১ হাজার ৬৫০ ডলারের উপরে উঠেছে। এর আগে প্রায় এক মাস ধরে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমতে থাকে। এতে দুই বছর পর প্রতি আউন্স সোনার দাম ১ হাজার ৬৫০ ডলারের নিচে নেমে যায়।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা কমতে থাকায় সম্প্রতি দেশের বাজারে টানা তিন দফা কমানো হয়েছে দামি এই ধাতুর দাম। অবশ্য তার আগে কয়েক দফা দাম বাড়ানো হয়। ফলে গত মাসেই দেশের বাজারে ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতি ভরি সোনার দাম সাড়ে ৮৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্ববাজারে সোনার দরপতন শুরু হয়। গত ১২ আগস্ট প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৮০১ দশমিক ৮২ ডলারে। সেখান থেকে কমতে কমতে গত সপ্তাহের লেনদেন শুরুর আগে প্রতি আউন্সের দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ২৬ ডলার।
এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে লেনদেনের শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমার প্রবণতা দেখা যায়। এক পর্যায়ে দাম কমে প্রতি আউন্স ১ হাজার ৬১৬ ডলারে নেমে যায়। তবে সপ্তাহের শেষে তা বেড়ে ১ হাজার ৬৬০ দশমিক ৫২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৬ ডলার বা ১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। তবে মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে সোনার দাম এখনো ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ কম আছে। এদিকে বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে সোনার দাম কমায় গত মাসে দেশের বাজারে তিন দফা দাম কমানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে সোনার দাম কমেছে, দেশের বাজারে সেই হারে কমেনি। বরং গত মাসে বিশ্ববাজারে যখন সোনার দাম কমের দিকে ছিল, সেসময় দেশের বাজারে উল্টো দাম বাড়ানো হয়।
এতে ১১ সেপ্টেম্বর অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে নতুন উচ্চতায় ওঠে সোনার দাম। সেসময় সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা করা হয়। এর আগে দেশের বাজারে সোনার এত দাম আর দেখা যায়নি।
অবশ্য এই রেকর্ড দাম স্পর্শ করার পর সম্প্রতি তিন দফা দেশের বাজার দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৬ টাকা কমিয়ে ৮১ হাজার ২৯৮ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৬ হাজার ৪৮৫ টাকা করা হয়েছে।
আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৭০০ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ১৭১ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে সোনা বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৮২ হাজার ৩৪৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৮৭৫ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৬১৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ৭০০ টাকা কমিয়ে ৬৭ হাজার ৪১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৫৮৩ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ৮৭১ টাকা করা হয়। তারও আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা কমিয়ে ৮৩ হাজার ২৮১ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৪৯০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম ১ হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৬৮ হাজার ১১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৫৬ হাজার ৪৫৪ টাকা করা হয়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ে সোনার দাম। মার্চের প্রথমার্ধেই প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর গত কয়েক মাসে কয়েক দফা সোনার দাম ওঠা-নামা করে। তবে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে পতনের মধ্যে পড়ে সোনা। সেপ্টেম্বর মাসের বেশিরভাগ সময়জুড়ে সোনার দরপতন হলেও শেষদিকে এসে দাম কিছুটা বাড়লো। এদিকে সোনার পাশাপাশি রুপা ও প্লাটিনামের দামও গত সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে রুপার দাম দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সের দাম ১৯ ডলারে ওঠে। প্লাটিনামের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের দাম দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ ডলার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন