শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অপরিকল্পিত উন্নয়নে জনদুর্ভোগ

গণমাধ্যমে খবরের শিরোনাম বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়ক

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১০ এএম

‘ধীরে ধীরে চল ঘোড়া’ ঢাকাই সিনেমার এই গানের মতো ঘোড়ার গাড়ি নয়; ইঞ্জিন চালিত যানবাহনও বিমানবন্দর মহাসড়কে ধীরে ধীরে চলেনি। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল হাজারো যানবাহন। গতকাল বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের কয়েকটির যানজটের খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। দেশের স্যাটেলাইন টেলিভিশনগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানজটের খবর ‘লাইভ’ প্রচার করা হয়। এমনকি একটি টিভির দুই থেকে তিনটি ক্যামেরা বিমানবন্দর টু গাজীপুর মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে পাঠানো হয়। সাপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে এই সড়কে যাতায়াতকারী কর্মজীবীরাদের যারা ঘরে থেকে বের হয়েছেন তাদের সীমাহীন দুর্গতিতে পড়তে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়।

রাজধানী ঢাকায় অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই নিত্য দুর্ভোগের পরিমাণ দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। ঘর থেকে একপা বেরুলেই পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ যানজটের কবলে। যানজটের কারণে রাস্তায় কর্মজীবী মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, সময় ও জ্বালানি। এতে কোন ধরনের ভ্রুক্ষেপ নেই সড়ক ও জনপথ এবং প্রকল্প সংশিষ্টদের। সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা সময় নিচ্ছেন, কাজ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কিন্তু আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ভোগান্তি কমছে না সিকি ভাগও।

ঢাকা বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের দুর্ভোগের জন্য দায়ি করা হয় বিমানবন্দর এলাকায় চলমান প্রকল্প কাজকে ঘিরে। বিমানবন্দর এলাকাকে ঘিরে চলমান রয়েছে ছয়টি মেগা প্রকল্পের কাজ। এছাড়াও দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়কের এমন বেহাল চিত্র ভাবিয়ে তুলছে নগরবাসীকে। কিন্তু এতো জনভোগান্তিতেও টনক নড়ছেনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের।

গতকাল রোববার ভোরে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গর্তে পানি জমে যায়। এতে চরম ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কের উত্তরা এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই যানজট পড়ে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। এই এলাকায় সৃষ্ট যানজট পরবর্তীতে সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে শ্যালো মেশিন সংগ্রহ করে বিমানবন্দর সড়কের পানি সরাতে উদ্যোগ নেয় পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। দুপুর ১২টার দিকে এই মেশিন দিয়ে তারা পানি সরানোর কাজ শুরু করে। ঘণ্টাখানেক পর কমে সড়কের পানি। তখন বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে গতি বাড়ে কিছুটা। তবে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের যানজট বিষয়ে কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে পারে বলে ডিএমপি ট্রাফিক সূত্রে জানা যায়।

এদিকে, যানজট এবং অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বিআরটি উত্তরার একাংশের প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ। তিনি বলেন, উত্তরায় দীর্ঘ যানজটের জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
বাসযাত্রীরা বলছেন, যানজটের প্রধান কারণ উত্তরা এলাকায় বিআরটিএ’র প্রকল্প। প্রকল্পের কাজের জন্য সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এসব গর্তে জমেছে পানি। এই পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গি বা গাজীপুরের দিকে যানবাহন দ্রুত গতিতে চলতে পারছে না। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

জানা যায়, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সকাল থেকেই বিমানবন্দর-গাজীপর সড়কে যানবাহনের জটলার কারণে তীব্র যানজট দেখা দেয়। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যানবাহনের জটলা দেখা দেয়। তবে যানজটের তীব্রতা দেখা দিয়েছে এই সড়কের জসিমউদ্দিন এলাকায়। এখানে গাড়িগুলো একই জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকার কারণে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছেনা। তাই এই অংশে যানজটের তীব্রতা বেড়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন ও গাড়ির যাত্রীরা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় না থাকায় এমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির সাধারণ যাত্রীরা গাড়িতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে গন্তব্যে যেতে না পেড়ে পাযে হেঁটে রওনা হয়েছেন। বৃষ্টি, গর্ত, খানাখন্দ আর বিশৃঙ্খল সড়কব্যবস্থায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দেখা দিয়েছে ব্যাপক যানজট। সকাল থেকে উত্তরার জসিমউদ্দিন রোড এলাকায় দেখা দিয়েছে যানজট। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে এই পথের যাত্রীরা। এছাড়া আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকামুখী সড়কে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বিশ্ব রোড, বনানী, কুড়িল প্রগতি সরণিজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরগামী সড়কে বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, কাওলা, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ছাড়িয়ে গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সকালের বেহাল অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি দুপুরেও। তবে স্থবির সড়কের পানি সরিয়ে যান চলাচল শুরুর ব্যবস্থা করেছে ট্রাফিক পুলিশ।

মো. নূরুজ্জামান চন্দন বলেন, সকাল ৬টায় মতিঝিল যাবেন রওনা দিয়ে উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে সকাল ৯টায় উত্তরায় জসিম উদ্দিন পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ডাক্তার এপোয়েনমেন্ট থাকায় সাড়ে ৭টায় রওনা দিয়ে রাস্তায় সকলের কষ্ট দেখে ভুলেই গেলাম যে আমিও তাদের একজন। অসংখ্য মানুষ বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছেন এরমধ্যে একজনকে বলতে শুনলাম দেশের তো মা-বাপ নাই তাই এই অবস্থা। ঢাকায় বসবাসরত প্রায় সবাই যানজট, যাতায়াত ভাড়া, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিসহ নানা অসুবিধায় রয়েছে যা দেখার কেউ নেই। এই রহস্যজনক কারণে এই রোডে যানজট হচ্ছে বলেও বলছেন অনেকে।

মো. আব্দুল্লা আল কাফি নামের আরেকজন যাত্রী বলেন, ঢাকা শহরের উন্নয়ন জনবান্দব নয়। তাই কোন উন্নয়ন মানুষের কাজে আসে না। ৫ থেকে ১০ কিমি. রাস্তা যেতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা।
ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কের এই ভোগান্তি সকাল থেকেই শুরু হয়েছে। সড়কটির বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তে পানি জমে যায়। এতে কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। এর বাইরে বিভিন্ন অংশে লেন সঙ্কোচন, সড়ক বিভাজক না থাকায় উল্টো পথে গাড়ি চলাসহ বিভিন্ন কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে দিনভরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

তারা বলছেন, সড়কে যানজটের এ চিত্র নিয়মিত। তবে বৃষ্টি হলে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এর মধ্যে গতকাল ভোরের বৃষ্টিতে সড়কের গর্ত-খানাখন্দে পানি জমে থাকায় কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলাচল করতে পারছিল না। তাই গাজীপুর অংশে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়ে যানজট দেখা দিলে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের সড়কে। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আরেফিন ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা বিমানবন্দর এলাকার দক্ষিণ পাশের একটি গর্তে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ার কারণে যানবানহন ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না তাই যানজট দেখা দিয়েছে। গাড়িগুলোকে এখানে এসে থেমে থাকতে হচ্ছে। এখানকার যানবাহনের জটলা গিয়ে উত্তরা এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে করে যাচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল ইনকিলাবকে বলেন, ভোরের বৃষ্টিতে উত্তরার সড়কের বেশকিছু এলাকা ডুবে যায়। উন্নয়নমূলক কাজের কারণে সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দ, গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সেসব গর্তে পানি জমে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকেলের পর এই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন