জীবন জীবিকা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ ভূমিহীন হচ্ছে
আবাসন মানুষের অন্যতম প্রধান একটি মৌলিক চাহিদা। আর্থ-সামাজিক খাত, জনসংখ্যার চাপ, জমির অপ্রতুলতা, নগরায়ন ও শিল্পায়ন সবকিছু বিবেচনায় এনে শহর-গ্রামে প্রতিটি জনবসতিতেই এখন পরিকল্পিত আবাসন জরুরি।
বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘নগরীয় কর্মপন্থা প্রয়োগ করি কার্বন মুক্ত বিশ্ব গড়ি’।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য দেশ গঠনে পরিকল্পিত নগরায়নের বিকল্প নেই। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিকল্পিত নগরায়নের পাশাপাশি গ্রীনহাউজ গ্যাসসমূহের নিঃসরণ কমানো অত্যন্ত জরুরি।
প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের পথ ধরে বাংলাদেশ আজ সারা-বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের শহরগুলোও দ্রুত বদলে যাচ্ছে। শহর এলাকায় জনঘনত্ব যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি বেড়ে চলেছে যানবাহন, ভবন এবং যন্ত্রপাতি থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও। মেগা শহরের পাশাপাশি জেলা, উপজেলায় পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন-যাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে অনুশাসন দেয়া হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে সরকারি চাকুরিজীবীদের আবাসন সুবিধা ইতোমধ্যে ২৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চলমান প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে ২০২৩ সালে এ আবাসন সুবিধা ২৮ শতাংশে উন্নীত হবে। এ সকল বহুতল আবাসন প্রকল্পে জমির নূন্যতম দুই তৃতীয়াংশ স্থান উন্মুক্ত রাখা অথবা জলাধারের সংস্থান এবং টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে নাগরিক জীবনে কার্বন নিঃসরণ বহুলাংশে কমে যাবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
এদিকে কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, দিবসটি উপলক্ষে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে এক বর্নাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা। গতকাল সকালে র্যালী শেষে কউক ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর (অবঃ) মুহাম্মদ নুরুল আবছার।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি আশেকুল্লাহ রফিক বলেন, কক্সবাজার সাগর পাহাড় নিয়ে গঠিত। এখানে ভূমি ব্যবহার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। জীবন জীবিকা ও জলবায়ু পরিবর্তন কারণে আমাদের মানুষ ভূমিহীন হচ্ছে।
এছাড়াও খাস জমি সরকারের বিভিন্ন বড় বড় প্রজেক্টের জন্য নেয়া হচ্ছে। দেশের বড় বড় কোম্পানী গুলোও জমি ক্রয় করে নিচ্ছেন। এতে আমরা প্রতিনিয়তই ভূমিহীন হচ্ছি। কক্সবাজারের মানুষ প্রতিনিয়ত ভূমি হারাচ্ছে এতে করে মানুষ যে কোন সময় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। তাই একটি মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকলের জন্য বসতি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী মুজিব বর্ষে ভূমিহীনদের আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। দিবসের বিয়টি নজরে রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে কউক চেয়ার কমোডোর মুহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবে। কক্সবাজারের কোন ভূমি অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা যাবেনা।
তিনি বলেন, দিবসটি প্রতি বছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার সারাদেশে এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৮৫ সালে এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। বিশ্ব জুড়ে সব মানুষের নিরাপদ ও মানসম্মত বাসস্থান নিশ্চিতের সচেতনতা বাড়াতে ১৯৮৬ সাল থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছরও অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।
কক্সবাজারে প্রায় ১.২০ মিলিয়ন রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় এখানকার জনসংখ্যার ঘনত্ব জাতীয় গড়ের প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ। এ কারণে এখানে বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠেছে ও এগুলো বর্ণিত বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রাকৃতিক ইকো-সিস্টেমে একটি বিরাট চাপ সৃষ্টি করছে।
ফলাফল হিসেবে কক্সবাজার বাংলদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় শহরগুলির মধ্যে একটি। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার এবং স্থানীয় উপায় যাচাই করার মাধ্যমে এই অঞ্চল কার্যকরভাবে জলবায়ু সমাধানে অবদান রাখতে পারে। শহরটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণের অবদান রাখার সম্ভাবনা রাখে।একটি টেকসই পদ্ধতিতে সুনীল অর্থনীতি, মৎস্য এবং ইকো-ট্যুরিজম খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব।
এ বিষয়ে কক্সবাজার স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দিবসটির উদ্দেশ্য পূরণ এবং সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করার একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলার সম্ভাব্য সমাধান বের করা এবং এসডিজি আরও স্থানীয়করণ করা সম্ভব।
সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান এবং বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। সভায় বক্তারা বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজন মিটিয়ে শ্রেণী বৈষম্য হ্রাস করে টেকসই শহর গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবেশ, চলাচল, জলাশয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নতুন প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পিত শহর নির্মাণ করতে হবে। সভায় বক্তব্য রাখেন নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার দেব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাদিম সারওয়ার, গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম এবং কাওসার আহমেদ, নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন, শিক্ষাবিদ সুবিধ কুমার মৈত্র প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুর : জেলায় দিবস দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে গণপূর্ত অধিদফতরের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী লাবন্য বড়ুয়া এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।
আরো ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ নুর-এ আলম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, জেলা পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক ডা. আশফাকুর রহমান মামুন প্রমুখ।
খুলনা : দিবসটিকে ঘিরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকালে সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। বর্জ্যকে কীভাবে সম্পদে রূপান্তর করা যায় তা নিয়ে সকলের ভাবতে হবে। নগর উন্নয়নে বর্জ্যব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নেত্রকোনা : জেলা প্রশাসন ও জেলা গণপূর্ত অধিদফতর উদ্যোগে গতকাল দিবসটি পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা গণপূর্ত অধিদফতর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসিনুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মনির হোসেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন