অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে সৃষ্ট নিত্যদুর্ভোগের নাম যানজট। গত রোববার বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তবে গতকাল সোমবার এই পরিস্থিতি আগের দিনের মতো ছিলো না। এনেকটাই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু গতকাল সকালে বৃষ্টি হলেও এই সড়কে অন্য দিনের মতো তীব্র যানজট দেখা যায় নি।
গতকাল সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস হলেও সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল ছিলো মোটামোটি স্বাভাবিক। তাই ঢাকা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যানজটকে রহস্যজনক মনে করছেন অনেকে। এবিষয়ে আজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল। আগের দিনের এই যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানিবদ্ধতার কারণে এবং অপরিকল্পিক প্রকল্পের কাজের জন্য রাস্তা সরু হওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। তবে সারা দিনের ভোগান্তির যানজটের পর রাতে এসে এই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ পরিস্থিতির জন্য বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। এ দিকে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি আটকে থাকায় এর প্রভাব পড়ে গোটা মহানগরীতে। প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই দেখা দেয় যানজট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল প্রায় থমকে যায়। ঢাকায় প্রবেশ বা বের হওয়ার দু’টি পথেই ছিল তীব্র যানজট। সেই সাথে সড়কের মোড়গুলোতে ছিল কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড়। এ কারণে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে। যানজটের কারণে গাড়িতে না উঠে অনেকে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। অনেকে যাত্রীই দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন।
সাধারণ যাত্রীরা মনে করেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিদিন যানজট কাম্য নয়। আর এই এলাকাকে ঘিরেই নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর কাজ চলমান থাকলেও নেই কোন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা। এসব প্রকল্পের কারণে নিহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এতে কোন ধরনের ভ্রুক্ষেপ নেই সড়ক ও জনপথ এবং প্রকল্প সংশিষ্টদের। সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা সময় নিচ্ছেন, কাজ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কিন্তু আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ভোগান্তি কমছে না।
জানা যায়, গত রোববার ভোরে শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের গর্তে পানি জমে যায়। এতে চরম ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচল। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কের উত্তরা এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এই যানজট পড়ে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। এই এলাকায় সৃষ্ট যানজট পরবর্তীতে সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে শ্যালো মেশিন সংগ্রহ করে বিমানবন্দর সড়কের পানি সরাতে উদ্যোগ নেয় পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। দুপুর ১২টার দিকে এই মেশিন দিয়ে তারা পানি সরানোর কাজ শুরু করে। ঘণ্টাখানেক পর কমে সড়কের পানি। তখন বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে গতি বাড়ে কিছুটা। তবে রাতের আগেএই সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ট্রাফিক পুলিশ।
তবে যানজট এবং অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন বিআরটি উত্তরার একাংশের প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ। তিনি বলেন, উত্তরায় দীর্ঘ যানজটের জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা এর দায় এড়াতে পারি না। যত দ্রুত সম্ভব বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নির্মাণ কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এরপরও এই সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রকল্পের কোন কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এ সড়কে যানজটের এ চিত্র নিয়মিত। তবে বৃষ্টি হলে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। সড়কটির বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তে পানি জমে যায়। এতে কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। এর বাইরে বিভিন্ন অংশে লেন সঙ্কোচন, সড়ক বিভাজক না থাকায় উল্টো পথে গাড়ি চলাসহ বিভিন্ন কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে দিনভরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল ইনকিলাবকে বলেন, আসলে গত রোববার ভোরের বৃষ্টি ও সড়কে পানিবদ্ধতার কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। উত্তরার সড়কের বেশকিছু এলাকা ডুবে যায়। উন্নয়নমূলক কাজের কারণে সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দ, গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে সেসব গর্তে পানি জমে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বিকালের পর এই সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে সোমবার বৃষ্টি হলেও রাস্তায় পানি জমতে দেয়া হয়নি। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা মোটরের সাহায্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তাই যানবাহনও চলাচল ছিলো স্বাভাবিক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন