হযরত খাদীজা (রা:) আরবে একজন অত্যন্ত মার্যদাশালীনী ও সম্মানিত মহিলা ছিলেন। তার বংশসূত্র পঞ্চম পুরুষে হুযুরে পাক (সা:) এর বংশধারার সাথে মিলিত হয়েছে। আত্মীয়তার দিক থেকে খাদীজা ছিলেন হুযুর (সা:) এর চাচাতো ভগ্নি। পূর্বে তার দুটি বিবাহ হয়েছিল, উভয় স্বামীই মৃত্যুবরণ করায় তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করতেছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই সচ্চরিত্রা ও বিদূষী রমনী। তাই আরবের জাহেলী যুগেও তিনি তাহেরা অর্থাৎ পবিত্র নামে পরিচিত ছিলেন। প্রচুর ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলেন তিনি। তাবাকাতে ইবনে সা’দে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন মক্কার ব্যবসায়ী কাফেলা কোথাও রওনা হতো, তখন দেখা যেত খাদীজার একারই ব্যবসায়ী মালামাল সমগ্র কুরাইশ ব্যবসায়ীদের পণ্য সমাগ্রীর সমান।
রাসূলে করীম (সা:) এর বয়স যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হয়েছিল। বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে সততা, সত্যবাদিতা, উত্তম আচরণ ও বিশ্বস্ততায় সারা আরবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। লোকগণ তাঁকে আল-আমিন উপাধিতে ভূষিত করেছিল। হযরত খাদীজা (রা:) তার এই গুণাবলি ও সুখ্যাতির কথা শুনে তার কছে নিজের ব্যবসায়ের ভার গ্রহণ করতে তাঁকে অনুরোধ করেন এবং বলেন, আপনি আমার ব্যবসায়ের মাল দিয়ে সিরিয়ায় যাবেন। অন্যান্যকে যেভাবে বিনিময় দেয়া হয় অনুরূপভাবে আপনাকেও দেয়া হবে; বরং বেশি দেয়া হবে। রাসূলে পাক (সা:) প্রস্তাব গ্রহণ করে ব্যবসার মাল নিয়ে বসরা গমন করেন। বসরা থেকে প্রত্যাবর্তনের তিন মাস পর হযরত খাদীজা (রা:) রাসূলে পাক (সা:) এর কাছে নিজের বিবাহ প্রস্তাব পেশ করেন। হযরত খাদীজা (রা:) এর পিতা বহু পূর্বেই প্রাণত্যাগ করেছিলেন। চাচা আমর বিন আসাদ তখনো জীবিত ছিলেন। আরবে তখন নারীদের বিবাহ শাদীর ব্যাপারে স্বাধীনতা ছিল। নিজেরাই বিয়ে-শাদীর প্রস্তাব পাঠাতে পারত। এক্ষেত্রে বালেগ নাবালেগের মধ্যে প্রভেদ ছিল না।
হযরত খাদীজা (রা:) চাচার বর্তমানেই বিবাহের কথাবার্তা নিজেই পাকা করলেন। নির্দিষ্ট তারিখে আবু তালেব, হামযাহ ও বংশের অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ খাদীজা (রা:) এর গৃহে হাজির হলেন। আবু তালিব স্বয়ং বিয়ের খুৎবাহ পাঠ করলেন এবং পাঁচশ রৌপ্যমুদ্রা মোহরানা ধার্য করা হলো। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, খাদীজা (রা:) এর পিতা তখন জীবিত ছিলেন ও তার উপস্থিতিতেই বিবাহ হয়েছিল। মূলত: এ বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুল। ইমাম সুহাইলী দলিল প্রমাণসহ উল্লেখ করেছেন যে, হযরত খাদীজা (রা:) এর পিতা হরবে ফুজ্জারের পূর্বেই মারা গিয়েছিলেন। হযরত খাদীজা (রা:) যে বাড়িতে বাস করতেন সে বাড়িটি এখনো তাঁর নামেই পরিচিত। মুআবিয়া যে বাড়িটি ক্রয় করে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছিলেন এ বিয়ের সময় হযরত খাদীজা (রা:) এর বয়স ছিল চল্লিশ বছর। প্রথম দু’স্বামীর ঔরসে তার দুটি ছেলে সন্তান এবং একটি কন্যা সন্তান ছিল। হুযুরে পাক (সা:) এর ছেলে মেয়েদের মধ্যে শুধু ইব্রাহীম ছাড়া সাবাই-ই বিবি খাদীজার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসূলে পাক (সা:) এর বংশ ধারা হযরত খাদীজা (রা:) এর ঔরসজাত ছোট মেয়ে মা ফাতিমা জাহরা (রা:) এর মাধ্যমেই রোজ কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। সুতরাং, মুমিনগণের উচিত রাসূলে পাক (সা:) ও তার বংশধরগণের ওপর ভক্তিভরে দরূদ ও সালাম পেশ করা। আল্লাহপাক আমাদেরকে এর তাওফীক এনায়েত করুন। -আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন