মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিল্প উৎপাদন বিঘ্নিত

হোটেল ও রেস্টুরেন্টসহ সারাদেশের দোকানপাটও ছিল ব্যবসাশূন্য, বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম

জাতীয় গ্রিডে সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে স্থবির ছিল জনজীবন। সেই সঙ্গে দৈনন্দিন অপরিহার্য এই জোগানের অভাবে শিল্পের উৎপাদন মারাত্বকভাবে ব্যহত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। এতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ নেতৃত্ব দেওয়া পোশাকখাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। শুধু পোশাকখাতেই নয় বরং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, খাদ্যজাত দ্রব্য, কৃষিজ, জাহাজ প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে সব ধরনের উৎপাদনে বড় ভাটা পড়েছে। এছাড়া হোটেল ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা, সারাদেশের দোকানপাটও ছিল ব্যবসাশূন্য। এতে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিটি কারখানায় জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তবে জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হলে পণ্যের কোয়ালিটি, উৎপাদন ও খরচ বেড়ে যায়। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাবো যেন এ সমস্যার সমাধান হয়। এটা অব্যাহত থাকলে বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক খসরু চৌধুরি বলেন, উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় ক্ষতি যেটা হওয়ার সেটাতো হয়েই গেছে। আজকের (মঙ্গলবার) মতো আমরা ফ্যাক্টরি ছুটি দিয়ে দিয়েছি। তবে এটা যদি কন্টিনিউ করে তাহলে বড় ধরণের ক্ষতি হবে। নিপা গ্রুপের কর্ণধার বলেন, জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয় একটি দুর্ঘটনা। এটাতো কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করেনা। আশাকরি আগামীকাল থেকে সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে। বিকেএমই’র এক পরিচালক বলেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে আমাদের কারখানায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুতের মাধ্যমে যে খরচ হয় জেনারেটরে সেখানে বড় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। তবে দুপুর থেকে কারখানা বন্ধ পর্যন্ত কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে পণ্যের মান ও উৎপাদনে প্রভাব পড়বে।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা আরও জানান, গতকাল অন্যান্য দিনের মতোই পোশাক কারখানাগুলো বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দুপুর ২টার পর থেকে জেনারেটর দিয়ে চালানো হয়েছে। এতে খরচ যেমন বেড়েছে পণ্যের মানও কমেছে।

ক্ষতি হয়েছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতেও। বাংলাদেশ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ম্যানুফেকচার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, শুধু আজকেই না, প্রায় প্রতিদিনই চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এছাড়া যে শিডিউল জানানোর কথা, তাও ছিকমতো জানানো হয় না। এতে উৎপাদনে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে নিজের একটি প্লাস্টিক কোম্পানির উৎপাদনেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, বরং উৎপাদনমুখী সব খাতের একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা। এ প্রসঙ্গে দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূইয়া জানান, দিনের বড় একটি অংশ বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল না। তাতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দোকানীরা।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কমপক্ষে এক-দুই’শ মন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা যখন ধানটা উঠাই শুকানোর জন্য সেটা ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা যায়। তাতে ক্ষতি হয় না, কিন্তু সেটা যদি ৪-৫ ঘণ্টা হয়ে যায়; তখন ধানটা নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমাদের বিশাল অংকের একটা টাকা ক্ষতি হয়ে গেলো।

রাজধানী ঢাকায় সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসলেও বিভিন্ন এলাকায় আরও দেরিতে সংযোগ চালু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন