বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

প্রাণ ফিরেছে পর্যটন স্পটে

বেশিরভাগ হোটেলগুলো আগাম বুকিং

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম

ব্যবসায়ীদের মাঝে তৃৃপ্তভাব
সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে
প্রাণ ফিরেছে পর্যটন স্পটে। টানা ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের পদভারে মুখর এখন দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো। সারা দেশে দুর্গাপূজা, শুক্র এবং শনিবার সাপ্তাহিক, রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী’র কেউ যদি বৃহস্পতিবার ছুটি নেন, তাহলে টানা পাঁচ দিন। এ উপলক্ষে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, সিলেট, খুলনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটক স্পট গুলোতে ঢল নেমেছে মানুষের। কক্সবাজার পর্যটনশিল্প বেশ কিছুদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অনেকদিন পর সেখানে প্রাণ ফিরেছে। টানা ছুটিতে কক্সবাজারে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নেমেছে পর্যটকের ঢল। পর্যটকের পদভারে আবারও মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত। শুধু সৈকত নয়, আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এদিকে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। জেলা শহরের মূল পর্যটনকেন্দ্র ও বিনোদনকেন্দ্রসহ পুরো রাঙ্গামাটি শহরজুড়ে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।

পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত বান্দরবান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণপ্রেমীদের সমারোহে সৃষ্টি হয়েছে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এখন উপচেপড়া ভিড়। এছাড়া সিলেটে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব মিলে ছুটে এসেছেন অনেকে। এরইমধ্যে ৯৫ শতাংশ হোটেল-মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। খুলনা সুন্দরবনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা বেড়েছে। কেউ কেউ সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছেন। বনের সবচেয়ে কাছাকাছি এবং আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলে দেখার জন্য ভিড় করছেন অনেকেই।

অন্যদিকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভ‚মি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ভোর থেকে সৈকতে ভিড় করছে নানা বয়সী মানুষ। সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালিতে নেমেছেন হাজারো পর্যটক। কক্ষ খালি না থাকায় পর্যটকদের আবাসন সুবিধা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হোটেল-মোটেল মালিকরা। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে এ প্রতিবেদন-
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, পাঁচ দিনের ছুটিতে গোটা সপ্তাহব্যাপী ছুটির আমেজ। এই সুযোগে বুকিং বেড়েছে হোটেল মোটেলে। পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে সৈকতে। চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই কক্সবাজের পর্যটক আকর্ষণের উদ্যোগ নেয়ায় সুফল পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসন বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী কক্সবাজার সৈকতে আয়োজন করে মেলা ও বিচ কার্নিভাল। এ আয়োজনকে সামনে রেখে পর্যটন নগরীর বিভিন্ন স্পটে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। এতে ছিল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজন। ঘোষণা দেয়া হয় ভ্রমণকারীদের জন্য মূল্যছাড়সহ বিনোদনমূলক নানা অনুষ্ঠান। আর এই আয়োজনের প্রচার প্রচারণা হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এই আয়োজনের সুফল ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছেন কক্সবাজারের হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। টোয়াকের সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, বীচ কার্নিভালসহ এবারে পর্যটন মৌসুমের শুরুতে প্রচারণার সুফল কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলে এখন থেকে সুফল পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমাদের আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কক্সবাজারের ৪২৫টি হোটেল মোটেলের ৯০ ভাগ বুকিং হয়েছে। আর ২৫০টির মত রেস্টুরেন্টে বেড়ছে বেচাবিক্রি।

খুলনা ব্যুরো জানায়, ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি সুন্দরবনে। নগর জীবনের যান্ত্রিকতাকে পিছনে ফেলে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন সুন্দরবনে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ, পড়ন্ত বিকালে আরেক রূপ, সন্ধ্যায় সাজ নেয় ভিন্নরূপে। মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানী থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব মাত্র চার ঘণ্টায় নেমে আসায় সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

গত কয়েকদিন ধরে সুন্দরবনের করমজল, দুবলার চর, হিরনপয়েন্ট, কোকিলমুনি, হারবারিয়া সব স্থানেই দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। করমজল পর্যটন স্পটে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মত। করমজলে রয়েছে কৃত্রিম বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, চিড়িয়াখানা, বনের ভিতরে দীর্ঘ কাঠের ব্রিজ ওয়াকওয়ে, সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের বড় একটি অংশ এক নজরে দেখা যায়। ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পরে বানর আর হরিণের দল। সৌভাগ্যক্রমে ডোরা কাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মেলে কোনো কোনো সময়। নদীতে দেখা মেলে কুমির ও ইরাবতী ডলফিনের। সুন্দরী গড়ান গেওয়া কেওড়া গাছের ডালে ডালে হাজার হাজার পাখির মিলন মেলা ও কলতানে দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছেন।

সিলেট ব্যুরো জানায়, টানা ছুটিতে পর্যটকদের বিশাল স্্েরাত এখন সিলেটজুড়ে। সিলেট অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে দেখা দিয়েছে সুদিনের আশা। পর্যটকদের ঘিরে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউস ব্যবসায়ীদের মধ্যেও তৃৃপ্তভাব কাজ করছে। নীল আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারিসারি পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে মেঘের মাখামাখি। পাহাড়ের চ‚ড়া থেকে অঝোরে নামছে শে^ত শ্রভ্র ঝর্ণারধারা। নিচে পাথরের বিছানা বেয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ-শীতল পানি। প্রকৃতির এমন অপূর্ব রূপ দেখা যায় কেবল সিলেটেই। তাই এই ছুটিতে পর্যটকরা সুন্দর দৃশ্য দুই নয়ন জুড়ে উপভোগ করছে। এদিকে, সিলেট হোটেল এন্ড গেস্ট হাউজ এসোসিয়েশনের সভাপতি সোয়েব আহমদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ক্ষতির পর টানা ছুটি উপলক্ষে পর্যটন খাতে সুদিনের পথ সুগম হয়েছে। সিলেটের সব হোটেল মোটেলগুলো এখন বুকিং। ব্যবসায়ীদের মধ্যে পর্যটনখাতে নিয়ে নতুন করে আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি থেকে জানান, সবুজের হাতছানিতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটছেন রাঙামাটিতে। বিপুল পর্যটকের আগমন ঘটেছে। পর্যটন বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। হোটেল মোটেল ছাড়াও শহরের পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসাও জমজমাট। এতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পরিবহন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পোশাক ও স্থানীয় উৎপাদিত পণ্য-সামগ্রী বিপণীসহ পর্যটন সংশিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য। এর ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাঙামাটি শহরের অভ্যন্তরীণ একমাত্র যানবাহন অটোরিকশা ও নৌযান চালকেরাও। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আগত পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রাঙামাটিতে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্পটের মধ্যে শুভলং ঝর্ণা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাদুঘর, ডিসি বাংলো পলওয়েল পার্ক, কাপ্তাই লেক, পেদাটিংটিং, টুকটুক ইকো ভিলেজসহ কাপ্তাই লেকের পাড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।

রাঙ্গামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সেলিম জানান, ‘টানা ছুটিতে এখানে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। এছাড়াও ছুটির দিনেও পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। শীত মৌসুমের শেষ দিকে ভালো সারা পাচ্ছি আমরা। আগে থেকেই বুকিং হয়ে থাকায় প্রতিটি হোটেল-মোটেল পরিপূর্ণ পর্যটকে।
স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান থেকে জানান, টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত হবে বান্দরবান। এমনটাই আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য আর বিচিত্রময় জীবন ধারা দেখতে এবারও পর্যটকে মুখরিত হতে চলছে বান্দরবান। নিয়মিত সরকারি ছুটি, মাঝখানে বৃহস্পতিবার ১ দিন অফিস খোলা থাকলেও অনেকেই সে দিন ছুটি নিয়ে টানা ৫ দিন উপভোগ করতে পরিবার নিয়ে পার্বত্য বান্দরবানের অপার সৌন্দর্য দেখতে হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট গুলো আগে থেকে বুকিং দিয়ে রেখেছেন। বান্দরবানে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও এখানে রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নাফাকুম, রেমাক্রি, চিম্বুক, নীলদিগন্তসহ সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো পর্যটন স্পট। ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকের পদভারে এখন মুখর হয়ে উঠবে বান্দরবান। পুরো শহর জুড়ে পরিণত হবে মিলন মেলায়। বান্দরবানের হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টানা ছুটিতে পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষণীয় হবে ইনশাআল্লাহ।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। আগামী ১ সপ্তাহ’র জন্য আগাম বুকিং হয়ে গেছে আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো। রুম সঙ্কটে দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃৃতীয় শ্রেণির আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে অনেকেই অতিরিক্ত মুনাফার লোভে রুম খালি থাকতেও আগাম বুকিং নিচ্ছে না এমন অভিযোগ অনেকেরই। গত বৃহস্পতিবার থেকে একটানা পর্যটক রয়েছে সমুদ্র সৈকতে। বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও পর্যটকদের যেন উৎসাহ উদ্দীপনায় শেষ নেই। বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়ানো, কেনাকাটা এবং সমুদ্রে গোসল ও হই হুল্লোড়ে মেতে উঠে পর্যটকরা। কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব জানান, ৫ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর আবাসিক হোটেলগুলোর বেশিরভাগ আগাম বুকিং রয়েছে। তবে এসি রুমের চাহিদা বেশি থাকলেও পর্যাপ্ত এসি রুম না থাকায় চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আ. খালেক জানান, ছুটিকে ঘিরে অসংখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটে। আজ থেকে আরো ভিড় বাড়বে। পর্যটকদের ভিড়কে মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকরা ভ্রমণে এসে নিরাপত্তাজনিত কারণে যেন কোন অপ্রতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় সেই দিকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন