যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ রোববার সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মুসলিম উম্মাহ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যুদিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। দিনটি পালন করতে দেশব্যাপী নানা আয়োজন করেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে দিনটি সরকারি ছুটির দিন এবং দেশের মুসলমানরা এ দিন বিশেষ ইবাদত করেন। দিনটি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা, কোরআন খতমসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, মসজিদ ও মাদরাসা। বিভিন্ন সংগঠন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে জশনে জুলছ আনন্দ র্যালী বের করবে। সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের কাছে ১২ রবিউল আউয়াল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণময় দিন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানবী ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল মাসে সউদী আরবের পবিত্র মক্কায় মা আমিনার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন। আবার মাত্র ৬৩ বছর বয়সে একই দিনে তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। আল্লাহপাক মুহাম্মদ (সা.) কে মানব জাতির জন্য রহমত স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। মহানবী সা. এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। তার আবির্ভাব এবং ইসলামের শান্তির বাণীর প্রচার সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সাহানে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বাদ মাগরিব পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এর আগে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলার উদ্বোধন করেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুৎবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাআত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠন বিষয়ক সেমিনার। অন্যদিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০ টি ইসলামিক মিশন ও ৭ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন মাগরিবের পর থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। দেশবরেণ্য পীর-মাশায়েখ ও ওলামায়ে কেরাম মাহফিলে বয়ান করবেন।
আনজুমানে রহমানিয়ার মইনিয়া মাইজভান্ডারিয়ার কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তি মহাসমাবেশ ও জশনে জুলুছ অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মাইজভান্ডার দরবার শরিফের সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী। দা’ওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশের উদ্যোগে বেলা আড়াইটায় নগরীর সায়েদাবাদ ফায়জানে মদীনা কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুছ (র্যালী) বের করা হবে। র্যালীটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এজিবি কলোনীতে গিয়ে শেষ হবে। মিরপুর দরবার শরীফে সকাল ৭টায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সর্ম্পকে আলোচনা শেষে মোনাজাত পরিচালনা করবেন সম্মেলনের আহবায়ক ডক্টর সৈয়দ এম সাঈদুর রহমান আল মাহবুবী।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.)’র আদর্শ ও বিচক্ষণতা বর্তমান বিশ্বে জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র জন্ম ও ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। মহান আল্লাহ তা’আলা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর এই দিনে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ্ তথা বিশ্ববাসীর শান্তি মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ্ যথাযথভাবে অনুসরণের মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দান করুন।
এছাড়া বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে বিবৃতিতে দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন