সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং স্টিগমাকে দূরে সরিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল নানা আয়োজনে দেশব্যাপি ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভালো থাকাই হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার’ এই প্রতিপাদ্যে পালিত হয়েছে এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির বিভিন্ন আলোচনায় বক্তারা এ দাবি জানান। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি পালনে বাংলাদেশেও সরকারি বেসরকারিভাবে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৩ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভূগছেন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাংজাইটি, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, সাইকোসিস ডিজঅর্ডার, সাবস্টেন্স অ্যাবিউজ, হেলথ অ্যাংজাইটি, আর্থিক নিরাপত্তা, নিরাপত্তাহীনতা এসবে প্রতিনিয়ত ভুগছে মানুষ। যেকোনো বয়সের মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সময়ে ও এর পরবর্তীতে মানসিক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আত্মহত্যা করা ৫০ ভাগেরই মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী, বয়স্কদের মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ১৬ দশমিক ৮ ভাগ। তরুণদের ১৩ ভাগ। দেশে ৩ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মানসিক সমস্যায় আছেন। আর সাড়ে ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য এ সেক্টরে চিকিৎসক আছেন মাত্র এক হাজার! করোনার সাথে যুক্ত হয়েছে মানবসৃষ্ট দুর্যোগসমূহ যেমন, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাধ্যতামূলক দেশান্তর, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা গতকাল আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের অধীনে মনোযত্ন আউটডোর কাউন্সিলিং এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এতে বক্তারা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং স্টিগমাকে দূরে রেখে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জাননো হয়। বক্তারা বলেন, আত্মহত্যা প্রবণতা প্রতিরোধকল্পে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং শিশু, তরুন, নারী এবং বয়োবৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার সাথে সমন্বয় করে মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি কিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সার্বজনীন করে গ্রাম, উপশহর ও উপজেলা ভিত্তিক করা যায় এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে হবে। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরের সিনিয়র সাইকোলজিস্ট রাখী গাঙ্গুলীর সঞ্চলনা ও পরিচালনায় এতে যুক্ত ছিলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি প্রোভাইস চ্যান্সেলর সমাজ মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. হামিদা আখতার বেগম এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট এবং বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান। দিবসটির বিভিন্ন আলোচনায় বক্তারা বলেন, করোনার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যে একটি ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এই বিপর্যয়ে বিভিন্নভাবে আক্রন্ত হয়েছে শিশু, তরুণ, বয়োবৃদ্ধ এবং নারীরা। এরসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে অত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা। আত্মহত্যা থেকে প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে তারা সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং বিভিন্ন স্তরে মনোসামাজিক শিক্ষনের উপর জোরদেন। মানসিক স্বাস্থ্যজীবিদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ব্যাপকভাবে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের পরামর্শ দেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা এবং আত্মহত্যাপ্রবণতা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। যে সমস্যা নিয়ে তারা ভুগছেন তাদের অনেকগুলোই সমাধান যোগ্য।
বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, করোনার সময়ে ও করোনা পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন