আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে রাশিয়ায় যাচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জ্বালানি পরিস্থিতিই তাদের এই বৈঠকের শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের রাশিয়া সফরের কথা সোমবার ঘোষণা করে আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ডব্লিউএএম। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বাইরে গিয়ে ওপেক প্লাস তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে মস্কো সফরে যাচ্ছেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়া উভয় দেশই ওপেক প্লাস গ্রুপের সদস্য। গত বুধবার তেল-উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর এই জোট দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছায়। যা ২০২০ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। এছাড়া ওপেক প্লাসের তেল উৎপাদন কমানোর এই হার বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় ২ শতাংশের সমান।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বিশ্বের জ্বালানি সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সপ্তাহখানেক পর ওপেক প্লাসের এই দুই সদস্য দেশের প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন।
আমিরাতের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা ডব্লিউএএম-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ ইউএই এবং রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং উভয় দেশের অভিন্ন স্বার্থ আরও এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আলোচনা করবেন।’
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলছে, সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক এবং সংস্থাটিতে রাশিয়ার মিত্রদের তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদ এবং আবুধাবিসহ ঐতিহ্যবাহী উপসাগরীয় মিত্রদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা সউদী আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পর্যালোচনা করছে। কারণ জ্বালানি মূল্যের ওপর ওপেকের নিয়ন্ত্রণ কমানোর উপায় খুঁজছে ওয়াশিংটন।
তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্বালানি মন্ত্রী সুহেল আল-মাজরুই বলেছেন, তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল ‘প্রযুক্তিগত, রাজনৈতিক নয়’।
অবশ্য নভেম্বরের আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে পেট্রোলের দাম কম রাখার আশায় ওপেকের এই সিদ্ধান্ত ঠেকাতে বেশ জোরেশোরে চেষ্টা করে বাইডেন প্রশাসন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়লে সেটির প্রভাব নভেম্বরের নির্বাচনের ওপর পড়তে পারে এবং এতে করে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
এর আগে সউদী আরবের সাথে সম্পর্ক সংশোধনের চেষ্টায় গত জুলাই মাসে উপসাগরীয় শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে জেদ্দায় গিয়েছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু তেল উৎপাদন আরও বাড়ানোর বিষয়ে কোনো চুক্তি না করেই সউদী সফর শেষ করেন তিনি। মূলত বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সউদী আরব এবং বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে কাজ করে এসেছে। তবে ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়ে উপসাগরীয় এই দেশটির অবস্থান মূলত একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় ওয়াশিংটনের পাশাপাশি মস্কো এবং বেইজিংও আমিরাতের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ইউক্রেন সংঘাত ঘিরে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য রোধ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে তেলের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক প্লাস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন