চট্টগ্রাম ব্যুরো : দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডসমূহের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিদের এক সভা গতকাল (শনিবার) প্রবীণ আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় মহাপরিচালকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিস আদ-দ্বীনিয়া বাংলাদেশ, গওহর ডাঙ্গা বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বেফাক সভাপতি আল্লামা শফী বলেন, সনদ স্বীকৃতির নামে কওমি মাদরাসায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ চাই না। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাসমূহ দারুল উলূম দেওবন্দের উসূল তথা নীতি-আদর্শে পরিচালিত। সনদের ইস্যুসহ যে কোনো বিষয়ে দেওবন্দের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বেফাকসহ দেশের অন্যান্য কওমি বোর্ড ও বড় বড় মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে সনদ দিয়ে থাকে। সরকার কওমি সনদকে মান দিতে চাইলে কোন কমিশন, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে মান দিতে পারে। তবে সনদ স্বীকৃতির নামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনোরূপ সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা আমরা মেনে নেব না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। নাগরিকগণ ধর্ম কিভাবে পালন করবেন, কিভাবে শিখবেন, কিভাবে শেখাবেন, তাতে সবার স্বাধীনতা রয়েছে। এই স্বাধীনতায় রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী বলেন, ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুভী (রাহ.) প্রণীত ৮ মূলনীতির মধ্যে ৭নং মূলনীতিতে সরকারের যে কোনো অংশীদারিত্ব কওমি মাদরাসার জন্য ক্ষতিকর বলে লিখেছেন। এটা মেনে চলার ব্যাপারে আমাদের সকলকে মজবুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের এত আগ্রহ ভালো লক্ষণ নয়।
পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আব্দুল হালিম বুখারী বলেন, কোনো ধরনের সরকারি কমিশন, কমিটি, কওমি শিক্ষা আইন, নিয়ন্ত্রণ ও সিলেবাসে হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের বিদ্যমান সনদকে যদি সরকার মান দেয়, তবে গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে সনদের স্বীকৃতি নেয়া সর্বাবস্থায় ক্ষতিকর হবে।
আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি মান না থাকায় আমাদের যে ক্ষতি রয়েছে, সরকারী মান গ্রহণ করা তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ক্ষতিকর। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সনদের সরকারি স্বীকৃতি কখনোই কল্যাণকর হবে না। তিনি বলেন, কোনো কমিশন গঠন, সিলেবাসে হস্তক্ষেপ ও সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া শুধু কওমি সনদের সরকারি মান দিলে গ্রহণ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, আমি আল্লামা শফীর নির্দেশনা মতেই চলতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আল্লামা শফী যে চিঠি দিয়েছেন, যে নিয়মের মধ্য দিয়ে সনদের মান নেয়ার কথা বলেছেন, তার সাথে আমিও সম্পূর্ণ একমত। হুজুরের নির্দেশনা মতে, দারুল উলূম দেওবন্দের সাথে আমাদের সম্পর্ককে আরো মজবুত করতে হবে। তিনি বলেন, যে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সেটা বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা সহজ হয়। আজকের বৈঠকে আমাদের সকল বোর্ড প্রতিনিধিগণ একসাথে বসে কথা বলছি, আমি মনে করি এটা বিশাল অগ্রগতি।
মাওলানা রূহুল আমীন বলেন, সনদের মানগ্রহণ সম্পর্কে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী যে রূপরেখা চিঠিতে তুলে ধরেছেন, তার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। তিনি সনদের মান গ্রহণের বিষয়ে বেফাক সভাপতির নেতৃত্বে সকল বোর্ডকে এক থাকার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, অন্তত প্রাথমিকভাবে সনদের মান গ্রহণের প্রশ্নে উপস্থিত সকল বোর্ডকে ঐকবদ্ধ থাকতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন