বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাড়ে ৯টায়ও অনুপস্থিত দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দাপ্তরিক সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকাল ৯টা থেকেই অফিস করার কথা। কিন্তু সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অন্তত ২০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনুপস্থিত দেখা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসনিক ভবন সরেজমিনে এই চিত্র দেখা যায়। এদিন দাপ্তরিক সময়ের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন অনুপস্থিত। এর মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের আইসিটি সেলের ১৩ চেয়ারে কেউ ছিল না। ৩১৩(ক) নম্বর কক্ষে ১১ জন, ৩১৯ নম্বর কক্ষে ১২ জন, ২০৮ নম্বর কক্ষে ১০ জন, ২০৭ নম্বর কক্ষে ৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন। হিসাব শাখা সকাল ৯টায় পুরোটা বন্ধ পাওয়া যায়। সাড়ে ৯টার দিকেও এ শাখার ১২৩(ক) নম্বর কক্ষে ৬ জন অনুপস্থিত ছিলেন। উপ-হিসাব পরিচালক মশিউর রহমান আসেন ১০টার দিকে।

৯টা ২০ মিনিটের দিকে পেনশন শাখার বেশিরভাগ চেয়ারই খালি দেখা যায়। এ সময় হিসাব শাখার পরিচালকসহ শাখাটির ১৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন। প্রধান প্রকৌশলী আসেন সাড়ে ৯টায়। সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম দত্তকে সাড়ে ৯টায়ও অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। একই সময়ে ট্রেজারার অফিসে একজন, সাড়ে ৯টায় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অফিসে (কক্ষ নম্বর ১১৮) ৩ জন, হিসাব শাখার আওতাধীন ১২৩(ক) নম্বর কক্ষে ৬ জনের সবাই, ১২৪(খ) নম্বর কক্ষে তিনজন, চেক দেওয়ার কক্ষে চারজন, ১২৪(গ) নম্বর কক্ষে ভর্তি শাখায় চারজন, ১২৪(ঘ) নম্বর কক্ষে ট্রাস্ট ফান্ড শাখার চারজনের সবাই, ১২৭ নম্বর কক্ষে ১৩ জন, ১১৭ নম্বর কক্ষে তিনজনের সবাই, ১১৬ নম্বর কক্ষের দুইজন, ১১৫ নম্বর কক্ষে আটজন, ১১৩ নম্বর কক্ষে একজন, ১০৩ নম্বর কক্ষে ট্রেজারার অফিসে একজন ও ভিসি অফিসে একজন অনুপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া প্রকৌশল দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও ই-টেন্ডার রুম, পরীক্ষা উপনিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ৩) সৈয়দা মাসুদা আক্তারের কক্ষে তালা ছিল। তবে ২১২, ২১২(ক), ২০৩ ও ২০৫ নম্বর কক্ষের সবাই উপস্থিত ছিলেন।

অফিস টাইমে কর্মকর্তাদের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিককে উল্টো প্রশ্ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তফা। তিনি বলেন, অফিস টাইমে আসেনি এটা কি দেখার দায়িত্ব আপনাদের? তিনি বলেন, আপনি বলেছেন, সেটা আমি দেখব। আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার দু-একজন ছুটি নিয়েছেন। কাকে কাকে দেখেছেন, সেটা তো আমি বলতে পারছি না।

অফিস টাইমে আপনিও আসেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তো রাউন্ডে থাকব। আমি রাউন্ড দিয়ে তারপর অফিসে আসব। আপনি তো এসব কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন না। আপনার কাছে বলারও কিছু নেই।

বিষয়টি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে বলে জানান ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট অফিসপ্রধান যারা আছেন, তাদের সতর্ক করতে হবে, যাতে বিলম্ব না ঘটে। আমরা আমাদের প্রশাসনের বিভিন্ন অফিসের প্রধানদের বলে দেবো যেন তারা সঠিক সময়ে অফিসে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করেন। যারা নিয়মের ব্যত্যয় করবেন তাদের সতর্ক করে দিতেও বলবো।

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার অফিস সংলগ্ন দফতর কিংবা অফিসগুলোতে ভবনের অন্য প্রান্ত থেকে তুলনামূলক সঠিক সময়ে উপস্থিতি সংখ্যা বেশি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ভিসি স্যার কয়েকদিন আগেও পুরো ভবন ঘুরে দেখেছেন। যাদের সেসময় অফিসে পাননি তাদের শোকজও করেছেন। এছাড়া ভিসি, প্রো-ভিসি এনাদের অফিসের পাশাপাশি অফিস হওয়াতে এদিকটায় গাফিলতি করার সুযোগ থাকে না খুব একটা। আমরা যারা সঠিক সময়ে অফিসে আসি বাকিরাও কিন্তু চাইলে আসতে পারে। এটা তাদের সদিচ্ছার অভাব বলে আমি মনে করি। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে একটা শিক্ষার্থী কিছুদিন আগেও অনশন করেছিল। ফলে একটা জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে কিন্তু সময়ের ব্যবধানে তা হারিয়ে গেল।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কাজে হয়রানি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসদাচরণের বিরুদ্ধে ৮ দফা দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে অনশন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। পরবর্তীতে তার অনশন ভাঙিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আশ্বাস দেন যে, আর কোনো শিক্ষার্থীকে দাপ্তরিক কাজে প্রশাসনিক ভবনে যেতে হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন