বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত

ইরিনা ইলমা | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব, সেহেতু সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখার জন্য ইসলাম একে অপরের প্রতি সম্ভাষণ জানানোর এমন চমকপ্রদ বাক্য ও পদ্ধতি শিখিয়েছে যা অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করে ; আর পরিচিত ব্যক্তির সম্পর্ককে করে অধিকতর সুদৃঢ়। শুধু তাই নয়; ইসলামের এই অভিবাদন পদ্ধতি পারস্পরিক মনোমালিন্য ও শত্রুতার মনোভাব দূর করে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। সালামের মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে পড়ে শান্তি-সম্প্রীতির আলো। সর্বোপরী ইসলামের রীতি মোতাবেক পারস্পরিক যে সালাম বিনিময় হয় তা গতানুগতিক ও অন্তঃসারশূন্য কোন অভিবাদনসূলভ বাক্য নয়; বরং সালাম হচ্ছে একে অপরের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা কামনায় বিশেষ দু’আ। যাতে রয়েছে আল্লাহ তা’আলার নিকট অবারিত শান্তি, অফুরন্ত রহমত ও বরকত লাভের অনন্য আবেদন।
সালামের গুরুত্ব : আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে নবী, আমার আয়াতের ওপর ঈমান রাখে এমন লোকেরা যখন আপনার দরবারে আগমন করে তখন আপনি তাদেরকে ‘সালামুন আলাইকুম’ বলুন। (সূরা আনআম : ৫৪)। এ আয়াতে রাসুলে কারীম (সা.) কে সম্বোধন করে উম্মতকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যখন এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন উভয়েই বন্ধুত্ব ও আনন্দাবেগ প্রকাশ করবে একে অন্যের জন্য শান্তি ও রহমত কামনার মাধ্যমে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা দয়াময় আল্লাহর ইবাদত করবে, সালামের প্রসার ঘটাবে, অভুক্তদের আহার করাবে। আর তাহলেই তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিযী)। নবী কারীম (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্মুখীন হবে, তখন সে যেন তাকে সালাম করে। এরপর যদি তাদের মাঝে বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথরের আড়াল পড়ে যাওয়ার পর পূনরায় সাক্ষাৎ হয় তখনও যেন আবারও সালাম দেয়। (আবু দাউদ)। সালামের ফযীলত : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আসসালামু আলাইকুম বলবে, তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে, আর যে ব্যক্তি আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলবে তার আমলনামায় বিশটি নেকী লেখা হবে, আর যে ব্যক্তি আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু বলবে তার আমলনামায় ত্রিশটি নেকী লেখা হবে। (তাবরানী)। রাসুলে কারীম (সা.) ছোট-বড় সবাইকে আগে আগেই সালাম দিতেন। এমনকি নিজের কন্যা হযরত ফাতেমা র.কেও তিনি আগে সালাম দিতেন।
এখন অনেকে সালাম নেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন; সালাম দিতে অভ্যস্ত নন। তারা বয়সে বা মর্যাদায় ছোটদের সালাম করাকে মর্যাদাহানি বলে মনে করে। অথচ পূর্বোক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে ছোট-বড়, ধনী-গরীব কোন ভেদাভেদ নেই। সমগ্র সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছোট-বড় সকলকে সর্বাগ্রে সালাম দিয়ে সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। সালাম বিনিময়ে কৃপণ ব্যক্তি সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন : মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কৃপণ ওই ব্যক্তি যে সালাম দেয়ার মধ্যে কার্পণ্য করে। (তাবরানী)।
নিজ ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়ার প্রতি তাগিদ : সকলেই পরিবারের সদস্যদের সাথে মায়া-মমতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাই। কামনা করে পরিবারের জন্য শান্তি-কল্যাণ ও বরকত। আর পারিবারিক বন্ধন সুসংহতকরণ এবং পরস্পরের জন্য রহমত ও বরকত কামনা করার উৎকৃষ্ট পন্থা হলো সালাম। এ প্রসঙ্গে আল্লকহ তা’আলা বলেন, ’তোমরা যখন তোমাদের ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমাদের পরিবারবর্গ ও আপনজনদের প্রতি সালাম প্রদান করবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষা দেওয়া সালাম উত্তম অভিবাদন বরকতময় ও পবিত্র।’ (সূরা নূর : ৬১)। একদিন রাসূল (সা.) হযরত আনাস র. কে বললেন, ‘হে বৎস, যখন তুমি তোমার ঘরে পরিবার-পরিজনের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তুমি সালাম করবে। এতে তোমার ও তোমার পরিবারের সকলের জন্য বরকত নিহিত রয়েছে।’ (তিরমিযী)।
সালাম বিনিময় সম্পর্কিত আদব : ১. অন্য কথা না বলে আগে সালাম দেওয়া। এটিই উত্তম। ২. পথচারীকে আরোহী ব্যক্তি, দাড়ানো ব্যক্তিকে পথচারী, অবস্থানকারীকে আগন্তক, অধিক সংখ্যককে কমসংখ্যক এবং অধিক বয়সীকে কম বয়সী কর্তৃক আগে সালাম দেওয়া উত্তম। ৩. একাধিক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে অবস্থানকালে তৎমধ্য থেকে একজন সালাম দিলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। ৪. সম্মিলিতভাবে অবস্থানরতদের উদ্দেশ্যে সালাম দিলে তৎমধ্য থেকে একজন জবাব দিলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। ৫. সালামের জবাব সালাম দাতাকে শুনিয়ে দেওয়া। ৬. সালাম বিনিময়কালে হাত কপালে না ঠেকানো এবং মাথা না ঝুকানো। ৭. খালিঘরে প্রবেশকালে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল বাইত’ পড়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন