ইসলাম এভাবে সকল মানুষের মান-মর্যাদার নিরাপত্তা প্রদান করছে। উল্লেখ্য, নারীর মান-মর্যাদা সংরক্ষণে ইসলাম এবং তার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বিশেষ যত্নশীল ছিলেন। আল-কুরআনের বানী তিনি পেশ করেন ঃ “যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে ধিকৃত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’’
‘‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। রাসূলে করীম (সা:) তার অসংখ্য হাদীসেও মানুষকে অহেতুক মারধর, অবমাননা ও অপমান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
প্রিয়নবী (সা:) আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগেই সকল মানুষের সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা একটি সুশীল সমাজ, আদর্শরাষ্ট্র এবং সৌহার্দময় বিশ্ব গড়ার রূপরেখার বাস্তবায়ন করে গেছেন। আল্লাহর ফরমান তিনি বিশ্ববাসীকে শোনান ঃ “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।’’ নবীজী (সা:) ঘোষণা করেন ঃ “যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে যেয়ে নিহত হয় সে শহীদ’’
রাসূলে আকরাম (সা:) মানুষকে মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। শধু তাই নয়, ভয়-ভীতি এবং পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে থেকে সত্য প্রকাশ করা মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব বটে। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ঃ “আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে।...
“আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি যুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ শ্রবণকারী, বিজ্ঞ।’’
নবীজী (সা:) ইরশাদ করেন ঃ “সবচেয়ে সম্মানজনক জেহাদ হল অত্যাচারী শাসকের সমানে সত্য বলা। সুতরাং ইসলাম কেবল মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাই প্রদান করেনি, বরং এটিকে একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবেও গণ্য করে।
সৎ উদ্দেশ্যে সংগঠিত হওয়ার মৌলিক অধিকার প্রিয়নবী (সা:) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তবে তা অবশ্যই কোন অসৎ উদ্দেশ্যে হবে না। রাসূলে করীম (সা:) মানবজাতির সামনে আল্লাহর হুঁশিয়ারী পেশ করেন ঃ “আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শনসমূহ আসার পরেও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) সকল মানুষকে এ মৌলিক অধিকারটি প্রদান করেন। আল্লাহর ফরমান তিনি মানবজাতির সামনে পেশ করেন ঃ “তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তার দেয়া যিকি আহার কর।’’
জাতি-ধর্ম-বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার রাসূলে করীম (সা:) প্রদান করেন। এক্ষেত্রে কোরআনী বক্তব্যঃ “আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার মীমাংসা করতে আরম্ভ কর। তখন মীমাংসা কর ন্যায়ভিত্তিক। “আমি (নবী) তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আদিষ্টি হয়েছি।’’
প্রিয়নবী (সা:) প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ইসলামে আইনের সুস্পষ্ট বিধান ছাড়া কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, আটক বা বল প্রয়োগ করা নিষেধ এবং একের দায় অন্যের উপর চাপানো অবৈধ।
প্রিয়নবী (সা:) সকল ধর্মের মানুষকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। ধর্মের ব্যাপারে ইসলাম কারো প্রতি জবরদস্তি করে না। মদীনা নগররাষ্ট্রে কোন অমুসলমানের প্রতি ধর্মীয় ব্যাপারে জবরদস্তিমূলক আচরণ করা হয়েছে- এ ধরনের তথ্য প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার ভোগ করতে পারে। নবীজী (সা:) এদেরকে মুসলমানদের আমানত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রাসূলে করীম (সা:) তাঁর পবিত্র জীবনে যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন, তা হল, ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্ম-গোত্র-বর্ণ ইত্যাদি বিদ্বেষের কারণে কোন ব্যক্তির মৌলিক অর্থনৈতিক চাহিদা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাবস্থান, চাকুরী লাভের অধিকার হরণ করা যায় না। নবীজী রাষ্ট্রে সকল মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন, সে রাষ্ট্রের কার্যক্রম চলত পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কার্যে অংশগ্রহণকে মৌলিক অধিকার হিসাবে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। এক্ষেত্রে আল্লাহর ফরমান তিনি পেশ করেন ঃ “যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে, নামায কায়েম করে, পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করেন ‘‘এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।’’
নবীজী তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানব সমাজের প্রতিটি সদস্যকে শিক্ষার অধিকার প্রদান করেছেন বললে বোধ হয় ঠিক বলা হবে না, বরং তিনি শিক্ষাকে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করে মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম একটি অনতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
মানব ইতিহাসে মানবদরদী হযরত মুহাম্মদ (সা:) দাস-দাসীদেরকে পূর্ণাঙ্গ মানুষের অধিকার প্রদান করেন। তিনি দাসপ্রথাকে সমূলে উচ্ছেদ করেন। খাদিজাতুল কুবরা (রা:)-এর সঙ্গে তাঁর শুভ বিবাহের সময় আরবের তৎকালীন ঐতিহ্য অনুযায়ী যায়েদকে দাস হিসেবে প্রদান করা হয়। কিন্তু নবীজী (সা:) তাঁকে মুক্ত করে দেন। অবশ্য রাসূলে করীম (সা:)-এর সাহচর্য ছেড়ে যায়েদ তাঁর নিজের পিতার সঙ্গে যেতে না চাইলে সারাজীবন নবীজী (সা:) তাকে এমন মর্যাদার আসনে রাখেন যে, সকলে যায়েদ (রা:)কে নবীজীর ছেলে মনে করতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন