দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মাঠ দখলে রাখার প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশ, মিছিল-শোডাউনের পাশাপাশি হামলা-সংঘাত বাড়ছে। এতে কয়েকজনের প্রানহানিও ঘটেছে। তাতে সাধারণ মানুষের মনে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্ক-সংশয় দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনসহ (ইভিএম) কয়েকটি ইস্যুতে একেবারেই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। সঙ্কট নিরসনে দুই দলের আলোচনা বা সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছে দলের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি লন্ডন ও কানাডা সফর থেকে দেশে ফিরে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে তিনি বিএনপির সাথে কোনো সংলাপ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাথে আর কোনো সংলাপ হবে না। এতে রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আর তাতে আন্দোলনের গুরুত্বই এখন মূখ্য হয়ে উঠেছে। আর এই সরকারবিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী দলগুলোর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আন্দোলনের প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় বাম দলগুলোর গুরুত্ব বেশ বেড়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি রাজপথের আন্দোলকে জোরদার করার চেষ্টা করছে। সরকারবিরোধী সব দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। গত ২৪ মে থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ নেতারা ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম দফায় সংলাপ করে। এ ২২ টি দলের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের মতো বামদলগুলো ছিল। এছাড়া সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে সংলাপের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিএনপি। চলতি মাসে দ্বিতীয় দফায় আবারো সংলাপ শুরু করেছে দলটি। এবার আরো কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করতে বেশ আগ্রহী বিএনপি। সিপিবি, বাসদসহ অন্যান্য বামপন্থী দলের সাথে সরাসরি মতবিনিময় না হলেও এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে তারাও রাজপথে থাকবে বলে বিএনপি মনে করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গঠনের লক্ষে কাজ করছি। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এখানে কে বামপন্থি কে ডানপন্থী সেটা মূখ্য নয়। গণতন্ত্র পনারুদ্ধার আন্দোলনে সবাইকে এক হয়ে এই অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এ দলের গুরুত্ব অনেকটা কমে গেছে। তাছাড়া বিএনপিও জামায়াতের সাথে আর জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে চাচ্ছে না। তাই এ দলটি এবার রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আর এই যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের চেয়ে বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংলাপেও বসতে চান না তারা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জোনায়েদ সাকি ইনকিলাবকে বলেন, বামপন্থি দলগুলো গণমানুষের দাবির পক্ষে সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন সব খানেই বামপন্থি দলগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদী কতৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র মুক্তির লক্ষে এ আন্দোলনেও আমরা সোচ্চার। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বামপন্থিদলগুলো অতীতের মতো এবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য ৯দফা দাবির একটি খসড়া রূপরেখা প্রস্তুত করেছে বিএনপি। এ দাবিগুলোর মধ্যে, বর্তমান জাতীয় সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগ। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল। বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কলাকানুন বাতিল। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ সেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা। বিদেশে অর্থপাচার, রাষ্ট্রীয় সব সেক্টরের দুর্নীতি চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন এবং গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা- রাষ্ট্রীয় নির্যাতন বন্ধ, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল, মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও রয়েছে। এই ৯দফা দাবি নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে বিরোধীদলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন