পার্বতীপুরে দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথরখনি মধ্যপাড়া থেকে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় ৫ মাস পর। গত বৃহস্পতিবার ২য় শিফট থেকে খনি ভূ-গর্ভে পাথর উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে গত বুধবার পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপাদান এক্সফ্লোসিভ (বিস্ফোরক) খনিতে এসে পৌঁছে। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় প্রায় স্থবির হয়ে পরে খনি। খনি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জিটিসি’র অধীনে কর্মরত প্রায় ৭০০ শ্রমিক-কর্মচারীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। ৩ শিফটে পাথর উত্তোলন চলবে। জানা গেছে, খনি ভূগর্ভে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত এক্সফ্লোসিভ সঙ্কটে পড়ে।
গত ১ মে থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়। এর আগে অ্যামোনিয়াম নাইট্্েরট সঙ্কটে ১২ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত উত্তোলন বন্ধ ছিল। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ থাকলেও এক্সফ্লোসিভ সঙ্কটে পড়ে গত ৫ মাস খনি বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারায় ৫০ কোটি টাকার লোকসান গোনে। একদিকে, খনি কর্তৃপক্ষের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে। অপরদিকে খনি রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিকে প্রায় শতকোটি টাকা খোয়া দিতে হয়। পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের উপর নির্ভরশীল দেশের নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলোতে পাথর সঙ্কট দেখা দেয়।
সূত্রমতে, মধ্যপাড়া খনির ভূগর্ভে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এজন্য বছরে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার এক্সফ্লোসিভ প্রয়োজন হয়। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ইমালশনসহ বিস্ফোরণ কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য মালামালের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। লেবাননের বৈরুতে অ্যামোনিয়াম নাইট্্েরডের গুদামে বিস্ফোরণ, কোভিড-১৯ এবং সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে এক্সফ্লোসিভের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। তাছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, জাহাজ সঙ্কট ও আন্তর্জাতিক বাজারে এক্সফ্লোসিভের মূল্যবৃদ্ধি এবং উচ্চ পরিবহন খরচ বিষয়টি আরও জটিল করে তোলে এক্সফ্লোসিভ ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এসব মালামাল আমদানি করতে একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করেও কারো সাড়া না পেয়ে এক পর্যায়ে খনি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে কয়েকদফা তা আমদানি করে পাথর উত্তোলন সচল রেখেছিল।
বলা হয়েছে, মধ্যপাড়া খনির পাথর উত্তোলনকারী ঠিকাদার বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট ও দেশীয় প্রতিষ্টান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম গত বছরের ডিসেম্বরে আমদানিকৃত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও এক্সফ্লোসিভের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষ এমজিএমসিএল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এসব মালামাল আমদানির জন্য জিটিসিকেই অনুমতি দেয়। অনুমতি পেয়েই জিটিসি মে মাসে ভারত থেকে ২২৬ মে.টন এক্সফ্লোসিভ আমদানির জন্য এলসি খোলে। এরমধ্যে গত বুধবার ৭৫ টন এক্সফ্লোসিভ খনিতে পৌঁছেছে। চলতি মাসের শেষে অবশিষ্ট ১৫১ টন এক্সফ্লোসিভ বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া আগামী ১৫ অক্টোবর ১২০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান বৃহস্পতিবার এক্সফ্লোসিভ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান- বৃহস্পতিবার ২য় শিফট থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন