রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবার অসহায়

প্রচন্ড গরমে রাজধানীতে ঘন ঘন লোডশেডিং হাসপাতালে সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সারা দেশে লোডশেডিং চলছে। গ্রামগঞ্জে কখন বিদ্যুৎ আসে আর তা বোঝা কঠিন। তবে রাজধানী ঢাকার প্রতিদিন এলাকাভেদে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আশ্বিনের প্রচণ্ড গরম আর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হচ্ছে রাজধানীতে বসবাসকরা শিশুরা। গরমের কারণে বয়স্ক মানুষেরাও অসুস্থ হচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে ঘাম শরীরে শুকিয়ে গিয়ে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে। ফলে মানুষের সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া এবং কাশির মতো রোগ হচ্ছে। এছাড়াও হাসপাতালে থাকা রোগীদেরও কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, এ গরমে শিশু ও বয়স্করা বেশি অসুস্থ হচ্ছেন। লোডশেডিংয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাতাসও ঘরে না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনির আখড়ায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। যাত্রাবাড়ী, মুগড়া, ডেমরা, মাতুয়াইল, শ্যামপুর, কদমতলী, সায়েদাবাদসহ আশপাশের এলাকা একই অবস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে অপারেশন থিয়েটারে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ হোটেলে গতকাল দেখা যায়, কোথাও মোম কোথাও করোসিনের কুপি জ্বালিয়ে টেবিলে গ্রাহকদের খাবার দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে মো. হালিমা খাতুন নামে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে শিশু ও বয়স্করা গরমে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার দুটি সাড়ে তিন বছরের ছেলে রয়েছে। তারা দুই ভাই জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হচ্ছে। দিনে চার থেকে পাঁচ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার রাতের বেলাও বিদ্যুৎ চলে যায়। ফলে শিশুরা ঘেমে ঠান্ডা লেগে গেছে। শনির আখড়ার গৃহিনী সাহানা খাতুন জানান, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ফলে ভ্যাপসা গরমে বাচ্চাদের নিদারুণ কষ্ট করতে হচ্ছে। পরের বাড়িতে গৃহপরিচালিকার কাজ করেন আঙ্গুরি বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে পানি থাকে না। ফলে মানুষের বাসায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন ৫টি বাসায় কাজ করি। বিদ্যুতের কারণে সবার বাসায় যেতে পারছি না।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে ঘেমে শিশুরা পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে। শিশুদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে। জ্বর, বমি, ডায়রিয়ার আশঙ্কা থাকে। চামড়ায় ঘামাচি হয়। বেশি সময় ডায়াপার পরে থাকলেও এ সমস্যা হতে পারে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে তাপমাত্রার সমস্যার কারণে বেশি আক্রান্ত হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে শিশুরা গরমে ঘামতে থাকে। গরম ও ঠান্ডা লেগে তারা বেশি অসুস্থ হয়। এজন্য ঘরে বিকল্প হিসেবে শিশুদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা বা ঘরের বাইরে বাতাস আছে এমন স্থানে নিয়ে বসানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, শিশুরা খুব বেশি স্পর্শকাতর বলে অনেকে গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি, কাশিসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এ কারণে গরমে ছোটদের বিশেষ যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। তাই শিশুদের পানি ও স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে তিনি পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী কাওসার বলেন, গরমে অনেকেরই কষ্ট হয়। তবে শিশুদের কষ্টটা একটু বেশি হয়। এ সময়ে শিশুদের প্রতি একটু বেশি যত্নবান হতে হবে।
রাজধানীর লোডসেডিংয়ের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরপুরে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ আর লোডশেডিং হচ্ছে। মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা একরামুল কবির বলেন, গত শনিবার রাত ১২টার পর থেকে বিকাল পর্যন্ত চারবার লোডশেডিং হয়েছে। রবিবার সকাল পৌঁনে ৭টা থেকে পৌঁনে ৮টা, দুপুর পৌঁনে ১২টা থেকে পৌঁনে ১টা এবং রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। সেদিন দুপুর থেকে বিকাল র্পযন্ত আরও দুইবার বিদ্যুৎ গেছে। মাঝরাতেও যদি দুইবার বিদ্যুৎ চলে যায়, ঘুমাব কীভাবে?
ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আজিমপুর, মগবাজার, মালিবাগ, আরামবাগ, কমলাপুর, রামপুরা, বাসাবো, গোড়ান এলাকায় প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ বার বিদ্যুৎ গেছে। মুগদার বাসিন্দা মোর্শেদা বেগম বলেন, গত দুইদিন ধরে একবারে অসহ্য হয়ে যাচ্ছি লোডশেডিংয়ের কারণে। একে তো গরম, তার উপরে লোডশেডিং। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ৫ বার বিদ্যুৎ চলে গেছে। আমরা মধ্যবিত্তরা আইপিএস বা জেনারেটর চালানোর অবস্থায় নেই। চার্জার ফ্যান-লাইট যে কিনবো সেই সক্ষমতাও নেই। সবকিছুর দাম এত বেশি সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাচ্চারা নিদারুণ কষ্ট করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন