শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যমুনা ভাঙছে তিস্তাপাড়ে বন্যাতঙ্ক

তিস্তা ব্যারাজের সব কপাট খুলে দেয়া চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে অসময়ে যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভাঙনে যমুনা নদীর পেটে চলে গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের অর্ধশত ঘরবাড়ি। অসময়ের ভাঙনে এই ইউনিয়নের কয়েক বিঘা ফসলের জমি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙন থেকে জালালপুরসহ পাশের এলাকা রক্ষায় ২০২১ সালে ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনার পশ্চিম তীরে ছয় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করলেও পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে অসময়ে ভাঙছে নদী। অন্যদিকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ভারতের পাহাড়ী ঢলের কারণে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। নদীর ডালিয়া ও সিংড়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে তিস্তাপারে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ।

তিস্তায় বন্যা : রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা ব্যারাজের সব কয়টি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে করে নদীতে পানি বাড়ায় তিস্তাপারের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এরই মধ্যে তিস্তার চর এলাকায় কয়েক হাজার একর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার ইচলিচর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সিন্দুর্ণা, কালীগঞ্জের ভোটমারী ও কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ও পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, চোঙ্গাডারা, রাজপুর ও গোকুণ্ডায় পানি ঢুকছে। এতে কৃষকদের কয়েক হাজার একর ধানক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদৌলা জানান, ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে বুধবার থেকে তিস্তার পানি বাড়ছে। এতে বন্যার শঙ্কা দেখা দেয়ায় ব্যারাজের ৪৪টি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়াবিদ মো. আবুল মল্লিক জানান, গতকাল শুক্রবার রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাকি বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিও হতে পারে।

যমুনায় ভাঙন : ভাঙনে যমুনা নদীর পেটে চলে গেছে ঘরবাড়ি। তাই পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে অনেকে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম থেকে তোলা। এলাকাবাসী জানান, যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। অসময়ের ভাঙনে এই ইউনিয়নের বাড়িঘর ও জমি যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করলেও পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখায় গত এক সপ্তাহ ধরে জালালপুরে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই এক সপ্তাহে অর্ধশত ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা বিলীন হয়েছে। ভাঙনের এই তাণ্ডবে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনার তীরের মানুষ। ভাঙনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় বাড়িঘর সরানোর সময় পাচ্ছে না তারা।

জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর উত্তরপাড়া মহল্লার ওমর আলী, আবু হানিফ, পলাশ মণ্ডল, বাবু, সাদ্দাম, আরিছ, খলিল, আব্দুস সালাম, জেলহাজ, ইয়াছিন প্রমুখ বাড়িঘর যমুনাগর্ভে বিলীন হওয়ায় বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিনযাপন করছেন।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, ১৫টি বসতবাড়ি এবং ফসলি জমি যমুনায় বিলীন হয়েছে। গত তিন মাসে এভাবে সাড়ে ৩০০ ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ায় এলাকাবাসী এখন দিশাহারা।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী বর্ষার আগেই জালালপুরে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। জালালপুরসহ তিনটি স্থানে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।

ধরলার ভাঙন শঙ্কায় কুড়িগ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার : কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে কোনোভাবেই ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমণ্ডল এলাকায় ধরলার তীব্র ভাঙনে ১০টি ঘর-বাড়ি, অর্ধ কিলোমিটার সড়কসহ ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে চার শতাধিক পরিবার।

অন্যদিকে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনিরাম এলাকায় ধরলার ওপারে ৭টি বাড়ি ও ফসলি জমি ধরলায় বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে শতাধিক পরিবার। ধরলায় তীব্র ভাঙন দেখা দেওয়ায় উপজেলার চর গোরকমণ্ডল ও ধনিরাম এলাকার শতশত পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। চর গোরকমণ্ডল এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ হাজার ২শ’ জিও ব্যাগ দিয়ে মাত্র ৩শ’ গজ এলাকার ভাঙন ঠেকাতে পেরেছে। তীব্র ভাঙন দেখা দেয়ায় গত ধরলা পাড়ের মানুষ ১ সপ্তাহ ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে চর গোরকমণ্ডল গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

চর গোরকমণ্ডল এলাকার আজিজুল ইসলাম ও মাইদুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই এ এলাকায় ধরলার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত আড়াই তিন মাসে প্রায় ৩০টি পরিবার এবং ভুট্টা, আখসহ বিভিন্ন ফসলি জমি, গাছপালার বাগান ও বাঁশঝাড় নদী গিলে খেয়েছে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ হাজার ২০০ জিও ব্যাগ দিয়ে মাত্র ৩শ’ গজ এলাকার ভাঙন ঠেকানো গেলেও গত এক সপ্তাহে ধরলার তীব্র ভাঙন ৮ থেকে ১০টি বাড়িসহ একমাত্র সড়কটির বড় অংশ নদীতে চলে গেল। ভাঙন রোধ করতে না পারলে আরো ভিটাবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।

বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনিবার ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন বলেন, ধরলার পূর্ব পাড়ে দুই কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ধনিরাম এলাকার ধরলার পশ্চিম তীরে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, চর গোরকমন্ডল এলাকার নদীভাঙন উদ্বেগ জনক। ভাঙন প্রতিরোধে সংসদ সদস্যের সুপারিশসহ আবেদন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেওয়ায় তারা ২২শ’ জিও ব্যাগ বরাদ্দ করে। তিনি আরো জানান, ভাঙন ঠেকাতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ হাজার জিও ব্যাগের প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন