চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) ২০তম কংগ্রেস গতকাল রোববার দেশটির ‘গ্রেট হল অব দ্য পিপল’-এ শুরু হয়েছে। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদের জন্য পার্টির নেতা হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম দিনের বড় অংশ জুড়েই ছিল দেশটির নিজেদের পরাক্রমের ইতিবৃত্ত। সূত্রের খবর, সম্মেলনে দেখানো হয়েছে, গালওয়ান সংঘর্ষের কিছু অংশের ভিডিও ক্লিপ।
ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশের মত, শি জিনপিং গালওয়ানের ঘটনাকে নিজের শক্তিপ্রদর্শনের অন্যতম হাতিয়ার করেছেন। তাদের মতে, কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে গালওয়ান-সংঘর্ষের ভিডিও দেখানো দিল্লি-বেইজিং সম্পর্কের তিক্ততাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে ইতোমধ্যে তাইওয়ান ইস্যুতে কড়া হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন শি। তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানে বলপ্রয়োগ করা হবে না, এমন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না।’ এর পাল্টা জবাব দিয়েছে তাইওয়ানও। বলেছে, মাথা নত করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় জওয়ান। দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে ভারত-চীন সেনাবাহিনী এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। ওই ঘটনা দেশ দুইটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত করে তুলে। ঘটনার দু’বছর পরেও তা স্বাভাবিক হয়নি।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সিপিসি-র সম্মেলন চলাকালীন চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমে গালওয়ান সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, নিহত সেনার দেহ, নদীর পানি ঠেলে পরস্পরের দিকে এগিয়ে চলেছে দুই দেশের সেনা। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে চীনের সেনাবাহিনী, গালওয়ান উপত্যকায় নিজেদের জাতীয় পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন চীনা সেনা। এই দৃশ্যগুলি দেখানোর পাশাপাশি, এক চীনা সেনা ওই দিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে চলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তার নাম কিউই ফাবাও। তিনি গালওয়ান সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন।
এ বছর বেজিং অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে এই ফাবাওকে দিয়েই মশাল বহন করিয়েছিল চীন। যার প্রতিবাদে ওই অলিম্পিকের উদ্বোধনী এবং সমাপ্তি অনুষ্ঠান বয়কট করে ভারত। গালওয়ান যুদ্ধে আহত ফাবাওকে পরবর্তীকালে পুরষ্কৃতও করেছিল চীনা প্রশাসন। ‘বীরত্বে’র জন্য এ বারের পার্টি সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সুযোগও পেয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ ফাবাও গতকাল ছিলেন অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র।
ভারতীয় কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, সিপিসি সম্মেলনের আগে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে সংঘর্ষ বাধানো এবং ভারতকে সীমান্তে সেনা মোতায়েনে বাধ্য করে জিনপিং আসলে পার্টির মধ্যে নিজের ক্ষমতা আরও বেশি করে প্রদর্শন করতে চেয়েছেন।
ওই সূত্র জানাচ্ছে, পার্টি সম্মেলনে সেনার পরাক্রমের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয়েছে। যার বড় অংশজুড়ে ছিল গালওয়ান। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, জিনপিং বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করে তোলা হবে।’
একই সঙ্গে তিনি পরিষ্কার করে দিয়েছেন, সেনাবাহিনী চলবে কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশেই। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অরুণাচল এবং লাদাখ সীমান্তে অস্থিরতা নিয়ে বার বার আলোচনার পথে হাঁটার বার্তা দিয়েছে ভারত। ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখার কথা বলেছে। তা সত্ত্বেও সিপিসি-র সম্মেলনে গালওয়ান প্রসঙ্গ তুলে চীন বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কারও কথায় কান দেবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন