সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ঘুষ দিলেই নগদ কাজ, না দিলে হয়রানিতে পড়তে হয়। গ্রাহক হয়রানী, অনিয়ম-দূর্নীতি ঘুষ বাণিজ্যের আখড়ায় পরিনত হয়েছে এই ভূমি অফিস। ঘুম গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে, সার্ভেয়ার এডিএম রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এডিএম রুহুল আমিন তিনি তার অফিসের চেয়ারে বসে অনেকটা খোলামেলা ভাবে জনৈক এক নারীর কাছ থেকে প্রতিবেদন দেয়ার নামে ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন। তিন দফা ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘুষের টাকা গ্রহণের পর নিজ হাতে গুনে পকেটস্থ করছেন। ভিডিওটি বিভিন্ন লোকজনের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিয়ম-দূর্নীতি, ভূমি দখলের রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে তিনি মানুষকে হয়রানীসহ ঘুষের রাম-রাজত্ব কায়েম করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঘুষ গ্রহণের ভিডিও হাতে হাতে প্রকাশ হওয়ার পর ঘুষখোরদের বাঁচাতে তাদের দালালরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছেন। ভূমি অফিসের ওই সার্ভেয়ার রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে ঘুষ ক্যালেঙ্কারীসহ অনিয়ম-দূর্নীতির নানান অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
জানা যায়, উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষনঝুলিয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ব্রাক্ষনঝুলিয়া মৌজায় ০.১৮ শতক ভূমি তার দখলে রয়েছে। দখল থাকার পরও গ্রামের একটি পক্ষ জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায়। যে কারণে ওই ভূমি নিয়ে একই গ্রামের ইছবর আলীর পুত্র সিরাজ উদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে আদালতে বিবিধ মামলা (নং-৩৭১/২১) দায়ের করেন প্রবাসী আজিজুর রহমানের স্ত্রী জহুরা বেগম।
এ মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৭ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে ৯০৩ নং স্মারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি)'র কাছে নির্দেশ আসে। পরে সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সরকারী সার্ভেয়ার এডিএম রুহুল আমিন। বাদীনির বাড়ি ঘর, জায়গা-জমি দীঘদিন ধরে তার নিজ ভোগ দখলে থাকলেও ঘুষ না দিলে প্রতিবেদন তার বিপক্ষে দেবেন এমন ভয়-ভিতি দেখান এডিএম রুহুল আমীন। পরে বাধ্য হয়ে তিন দিনে দাবীকৃত ২৫হাজার টাকা ঘুষ দেন ওই ভূক্তভোগি নারী।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা ভূমি অফিসের যমুনা কক্ষে সার্ভেয়ার এডিএম রুহুল আমীন ভূক্তভোগি ওই নারীর কাছ থেকে ঘুষের ১০হাজার টাকা গ্রহণ করে নিজ ড্রয়ারে রাখছেন। ৬ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে আবারো ঘুষের ১০ হাজার টাকা গ্রহণ করে নিজ পকেটস্থ করেন রুহুল আমীন। এসময় নারীর কন্ঠে শুনা যায় এখানে ১০হাজার টাকা আছে, বাকি ৫হাজার টাকা আগামী কালকে দেব। এসময় অন্য একজন তার ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও রেকর্ড করার চেষ্টা করলে ওই রুহুল আমীন উচ্চ কন্ঠে বলতে থাকেন, বেশটা ভেজে খাচ্ছি, মোবাইল দেখাও না! মোবাইল দিয়া ভিডিও করো, বলে তাকে ধমক দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। ওই দিন ঘোষখোর সার্ভেয়ার রুহুল আমীন স্বাক্ষর শীল ছাড়া প্রতিবেদনটি ভূক্তভোগি নারীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। পরেরদিন দাবিকৃত বাকি ঘুষের ৫হাজার টাকা পরিশোধ করেন ওই নারী।
উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী সত্যবাবু, পিয়ন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর তহসিলদার সবাই ঘুষ বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। নামজারি, মিস কেস, মিস আপিল, সার্ভে রিপোর্ট, চান্দিনা ভিটা, খাস জমি বন্দবস্তি, ভিপি খাজনা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ঘুষের রাম রাজত্ব চলে ওই ভূমি অফিসে।
ভিডিও দৃশ্যটি তার স্বীকার করলেও টাকা বা ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন, অভিযুক্ত সার্ভেয়ার এডিএম রুহুল আমিন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসলাম উদ্দিন বলেন, ভিডিওটি তার নজরে আসার সাথে সাথে তাৎক্ষনিক সার্ভেয়ার রুহুল আমীনকে শোকজ করা হয়েছে।
তদন্ত পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন