দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমছে। এতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা পুঁজি ধারাবাহিকভাবে কমছে। আতঙ্কে অনেকে লোকসানে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে একদিকে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে হতাশা। আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিসে গতকালও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের তিন কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। শেয়ারবাজারের এই দরপতনের পিছনের কারণ হিসেবে আসন্ন বিশ্বমন্দার আভাস এবং চলমান লোডশেডিংকে দায়ি করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আগামী বছরে বিশ্বমন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মন্দার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এছাড়া দেশে এখন অনেক বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার ফলস্বরূপ শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা যাচ্ছে।
তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বভাস দিচ্ছে। মন্দার কারণে রফতানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও সার্বিকভাবে বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থা রয়েছে। তাই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির চাপ না বাড়িয়ে ধরে রাখা উচিত। শেয়ার বিক্রির চাপ কমলে দরপতনও কমে আসবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় শেয়ারবাজার খুলতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ১১টা ৩৭ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৭ পয়েন্ট কমে যায়।
অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে এসে কিছু বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। এতে মূল্য সূচকের পতনের মাত্রা কমে। তবে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে তার দ্বিগুণের বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির। আর ২২০টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৪০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ১০ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক মূল্য ৬ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি বাজারটিতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২৯১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এই দরপতনের বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী বছর বিশ্বমন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মন্দা শুরু হয়ে গেছে। মন্দার কারণে আমাদের রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান প্রবৃদ্ধি কমার কথা জানিয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, মন্দা আসলেও সার্বিকভাবে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাই আমি মনে করি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে শেয়ার ধরে রাখা উচিত। বিক্রির চাপ কমলেও তখন দরপতনের মাত্রা কমে আসবে।
এদিকে পতনের বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ৬৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জ। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮০টির এবং ৮৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন