বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যারা বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে, তাদের শনাক্ত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে এ তথ্য জানান আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়ে ইদানীং আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। ইতিমধ্যে অনেকে ধরাও পড়েছেন। মানি একচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সাত শতাধিক প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ক্ষেত্র বিশেষ তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বা আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত হচ্ছে। কে কী পরিমাণ টাকা পাচার করেছে এবং কোথায় করেছে এসব বিষয়ে তদন্তের পর বলা যাবে।
বড় বড় গোষ্ঠী, যারা টাকা পাচার করে এ রকম কাউকে শনাক্ত করা গেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের আগে অগ্রিম কিছু বলা যাবে না।
মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিদেশে বসে সবসময় অপপ্রচার হচ্ছে। মিথ্যাচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্রিমিনালগুলো বিদেশে থাকার কারণে এদের সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাই তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায়, কীভাবে তাদের শনাক্ত করা যায়, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা আরও গভীরভাবে দেখব। ডেটাবেস ধরে অপরাধীদের নজরদারি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অপরাধীদের একটি ডেটাবেস হয়েছে। সেগুলো দেখে ঘৃণ্য অপরাধে জড়িতদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এর আগে ঈদুল আজহাও আল্লাহর রহমতে সফলভাবে শেষ হয়েছে। অতীতের মতো এবারো তেমন যানজট ছিল না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মোজাম্মেল হক বলেন, সীমান্ত এলাকায় তাদের অপতৎপরতা নিয়ে সরকার সচেতন আছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল লোক আছে, যারা মাদক কারবারে জড়িত। মাদক আনা, পাচার করা বা সরবরাহ করছে তারা। সেগুলোর ওপর আরও বেশি কঠোর নজরদারি রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রাত্রিকালীন টহল আরও বাড়াতে ও মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীল হতে বলা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসা বন্ধে কঠোর হবে, যাতে মাদক দেশের ভিতরে আসতে না-পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কঠোর নজরদারি রাখতে হবে, জানান তিনি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, কিছু লোক এরমধ্যে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। ধর্মের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতা ও উন্মাদনা সৃষ্টিতে জড়িত সংগঠনের সঙ্গে তারা জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে যাদের ধরা হচ্ছে, তারাও স্বীকার করে নিয়েছে। সেগুলোর উৎস খুঁজে বের করতে চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে অনেকটা শনাক্ত হয়েছে। ভেজাল ওষুধপত্র কিংবা খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপি মাঠে নামছে, সামনের দিনগুলোতে তাদের কীভাবে মোকাবিলা করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি দেবেই। তারা মিটিং, মিছিল ও জনসভা করবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গুরুত্ব দেয়ারও কিছু নেই। কিন্তু আমাদের সেক্রেটারি বলেছেন, আপনারা মিছিল মিটিংয়ে জাতীয় পতাকা নিয়ে আসেন, তা ভালো কথা। জাতীয় পতাকার যদি নিয়ম মতো কোনো লাঠির মাথায় বেঁধে আনা হয়, তা ঠিক আছে। কিন্তু তা যদি গজারি কিংবা মোটা বাঁশের মাথায় বেঁধে নিয়ে আসেন, তখন তা মানানসই মনে হবে না, মনে হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তিন এসপিকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি রুটিন ওয়ার্ক। আইনেই আছে, ২৫ বছর পর সরকার যেকোনো কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠাতে পারে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে হয়তো তাদের কাছে কোনো তথ্য আছে। তাদের সার্ভিস হয়তো সন্তোষজনক নয়।
এ প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে পাশে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি আরেকদিন বলব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন