এক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল দেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র খাতুনগঞ্জে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো আমদানি করা পণ্যের বড় এই পাইকারি বাজারে সব ধরনের পণ্য লোড-আনলোডিং সেইসাথে দোকান, আড়তও বন্ধ ছিল। ছুরিকাঘাতে আহত মো. মাসুদ (৪১) নামে ওই শ্রমিক সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। নিহত মাসুদ নগরীর চাকতাই রাজাখালী রোডের মো. বেলায়েত হোসেন বেপারীর ছেলে।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ করে দিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানার খাতুনগঞ্জের ওসমানিয়া গলির মেসার্স সামিরা ট্রেডিংয়ের সামনে ওই শ্রমিককে ছুরিকাঘাত করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওইদিন সন্ধ্যায়। মাসুদকে ছুরিকাঘাতের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ রেখে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। দিনভর সকল ধরনের পণ্য ওঠানামা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর পুলিশি হস্তক্ষেপে সন্ধ্যায় তারা কাজে যোগ দেন। এরপর সচল হয় খাতুনগঞ্জের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
তবে গতকাল সকালে তার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আবার পাল্টে যায়। সহকর্মীর মৃত্যুর খবরে শ্রমিকদের মধ্যে আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দলে-দলে দোকান-আড়ত থেকে বের হয়ে তারা রাস্তায় নামেন। কাজ বন্ধ রেখে পুনরায় বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এর ফলে আবারো অচল হয়ে পড়ে খাতুনগঞ্জের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, পণ্য নিয়ে খাতুনগঞ্জে যাওয়া এক পিকআপ চালকের সঙ্গে মালামাল ওঠানামার কাজে নিয়োজিত ওই শ্রমিকের ঝগড়া হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যায় ওই পিকআপ চালক ‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে এসে মাসুদের ওপর হামলা করে। বৃহত্তর খাতুনগঞ্জ লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, রাসেল নামে এক পিকআপ ভ্যানচালকের সাথে মাসুদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় মাসুদকে হুমকি দেয় ওই চালক। এরপর সন্ধ্যায় রাসেল ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী নিয়ে মাসুদকে রাস্তায় টেনে হেঁচড়ে কয়েক দফা ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন তিনি।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবীর বলেন, হামলায় আহত মাসুদকে চমেক হাসপাতালের ২৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা দিনভর কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন। তবে রাতে নিহত মাসুদের নামাজে জানাজার পর শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে আগামীকাল (আজ) পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি। মাসুদের ওপর হামলার ঘটনায় পিকআপ চালক মোহাম্মদ রাসেলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ছেলে বাবুল। হামলাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও জানান ওসি।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেচাকেনা হয়। এখানকার প্রায় দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পণ্য সড়ক ও নৌপথে সারাদেশে যায়। ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, আমদানি করা চাল, মসলা ও কাঁচা পণ্য থেকে শুরু করে রাসায়নিক, ঢেউটিন, রংসহ সব ধরনের পণ্য বেচাকেনা হয়। খাতুনগঞ্জে বিক্ষোভের ফলে আশপাশের চাকতাই, আছদগঞ্জেও ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন