শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা ৬ নভেম্বর শুরু

৪২দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। রীতি অনুযায়ী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হলেও বিগত বছরের মতো এবারও করোনা পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এবছর এই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবছরের তুলনায় প্রায় ২ লাখ কমেছে। আগের দুই-তিন বছর করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ার কারণে পাশের হার বেশি থাকায় অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়াতে মোট পরীক্ষার্থীও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি জানান, চলতি বছর এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার কারণে আগামী ৩ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২ দিন সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

গতকাল বুধবার এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭, যা গত বছর ছিল প্রায় ১৪ লাখ। গতবারের চেয়ে এবার ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮৩ জন পরীক্ষার্থী কমেছে। মোট প্রতিষ্ঠান কমেছে দুটি আর কেন্দ্র বেড়েছে ২৮টি। বিদেশে ৮টি কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ২২২ জন পরীক্ষার্থী এই ৮টি বিদেশের কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে।

গতবার পাসের হার বেশি হওয়ায় এ বছর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী অনেক কমেছে। আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমার কারণেই মূলত এ বছর মোট পরীক্ষার্থী কমেছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১। গতবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি। কিন্তু এ বছর সেই সংখ্যা ৫৩ হাজারের কিছু বেশি। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় এ বছরের মোট পরীক্ষার্থী কমেছে।

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর বোর্ডে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্ত বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছি যে, কোথায় ঘটলো, কিভাবে ঘটলো? কি করে ব্যত্যয়গুলো ঠেকানো যাবে সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এবার যেন কোন ব্যত্যয় না থাকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিজি প্রেস থেকে ভুল প্রশ্ন গিয়েছিল, এবার যেন না হয় সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে ফাঁকফোঁকর ছিল সেটা আমরা চিহ্নিত করেছি এবং ব্যবস্থা নিয়েছি।

কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকবারই বলি কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। যদিও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সম্ভব না। এই কাজটি করে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ থাকে, কোথাও কোথাও কেউ বাইরে তালা লাগিয়ে কোচিং করান। দু’একটা আছে প্রকাশ্যেই করছেন, আবার একটি কোচিং সেন্টারের আওতায় অনেক রকম কোচিং চলে। আইইএলটিএস, বিসিএস চলে। সেসব ক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনকে বলেছি, আরও কঠোর হতে যেন আসলেই বন্ধ থাকে। যদি কোনো শিক্ষক তার বাড়িতে করছেন, যদি সেই তথ্য পাওয়া যায়, তথ্য পাওয়াটাও হয়তো কঠিন একেবারে ব্যক্তি পর্যায়ে; যদি তথ্য পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।


বই ছাপার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বই ছাপার কাজ পিছিয়ে আছে। তবে আমরা আশাবাদী ১ জানুয়ারি বই দিতে পারবো। আমরা প্রেসগুলোর সাথে যে চুক্তি করেছি তারা ১ তারিখ দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে যদি হঠাৎ কোন বিপর্যয়কর কিছু না ঘটলে ঠিক সময়ে দিতে পারবো। মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক কারণে আমাদের পরীক্ষা পিছিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে। সে রকম যদি আগে থেকে একেবারে আমরা বুঝতেই পারলাম না, হঠাৎ করে বিপর্যয় যদি না ঘটে আমরা এখনো বিশ্বাস করি সময় মতো বই দিতে পারবো। বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুতের যে অবস্থা আছে, সেটা মনে করা হচ্ছে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও আমরা আশাবাদী।

সুষ্ঠু পরীক্ষার জন্য যেসব সিদ্ধান্ত: সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে দেরিতে প্রবেশ করতে দিলে সেই পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্বের কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্ট্রারে লিখে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। আর কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কেন্দ্রসচিব) ছাড়া অন্য কেউ মুঠোফোন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও ছবি তোলা যায় না, এমন একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

এবারও নম্বর ও সময় কম: এবারও পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ২৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের (এমসিকিউ) মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। সময় ২০ মিনিট। লিখিত বা তত্ত্বীয় পরীক্ষার অংশে ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউর ৩০টির মধ্যে ১৫টির উত্তর দিতে হবে। সময় ২০ মিনিট। তত্ত্বীয় পরীক্ষার অংশে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৪টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি হলেও আগামী বছর পূর্ণ সময়ে ও সব বিষয়ে পরীক্ষা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকারসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন