আমরা মুসলমান, আমরা ভাগ্যবান। কেননা, ইসলামতো পরশপাথর। এর ছোঁয়ায় নিজেকে খাঁটি সোনার মতো খাঁটি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়। সকাল প্রকার অন্যায়, অসৎ কাজকে উপেক্ষা করে সৎপথে, দ্বীনের পথে আসা যায়। দ্বীনের পথে আসলে, দ্বীনি আমল করলেই তার জন্য জান্নাত পাওয়া আরও সহজ। কুরআন ও হাদিসে ছোট-বড় অনেক আমল রয়েছে যেগুলো আমাদের জান্নাতে যাওয়ার পথকে আরও সুগম করে। কিন্তু আমরা সব আমলকে গুরুত্ব দিই না। বিশেষ করে ছোট ছোট আমলগুলো এড়িয়ে যাই। যেমন- আযানের জবাব দেওয়া। আমলটি খুব ছোট এবং পালন করাও সহজ। তবুও আমরা অধিকাংশ মানুষ এটি করি না। এ আমলটি খুবই তাৎপর্যময় ও ফজিলতপূর্ণ।
আযান আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ঘোষণা, আহবান, ডাকা। অর্থাৎ, আযান অর্থ হলো নামাযের জন্য ডাকা বা আহবান করা। আযান শুনে নামাজ পড়তে হবে। নামাজ মুসলমানের জন্য ফরয করা হয়েছে। আযানের জবাব দেওয়াও উচিৎ, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয় এমন নয় যে, এটি না করলে গুনাহ হবে, বরং এটি করলে সওয়াব পাওয়া যাবে। আযান দেওয়ার জন্যই কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিন অধিক সম্মানী হবেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যদি জানত আযান দেওয়ার ভেতরে কী মর্যাদা রয়েছে, মুয়াজ্জিনের জন্য কী মর্যাদা রয়েছে, তাহলে লটারি করে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করত বিনা পয়সায়। (বুখারী শরীফ)।
এ দুটি হাদিস থেকে বোঝা যায়, আযান দিয়ে মুয়াজ্জিন কতোটা সওয়াবের অধিকারী হন। তাহলে এটা নিশ্চিত, যে ব্যক্তি আযানের জবাব দেবে সেও অনেক সওয়াব পাবে। হ্যাঁ, আযানের জবাব দিলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। আযানের জবাব দেওয়াও সহজ। মুয়াজ্জিন যা যা বলবে তাই বলতে হবে। শুধু ‘হাই য়ালাস সালাহ, হাই য়ালাস ফালাহ’ বললে এর জবাবে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়তে হবে। এরপরে আযানের দোয়া আর দুরুদ শরীফ পড়তে পারলে আরও ভালো হয়। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, মহনবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে আন-নাসাঈ)। এছাড়া, মহানবী (সা.) আরও বলেছেন,” যখন তোমরা আযান শুনবে, এর জবাবে তোমরাও মুয়াজ্জিনের অনুরূপ বলবে। (বুখারী শরীফ)।
আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রহ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আনসারী (রহ) হতে বর্ণিত, আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) তাকে বলেন- আমি দেখেছি তুমি বকরি চরানো এবং বন জঙ্গলকে ভালোবাসো এবং নামাজের জন্য আযান দাও। তখন উচ্চকণ্ঠে আযান দাও। কেননা জিন, ইনসান বা যেকোনো বস্তু যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আযান শুনবে, সে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। তখন আবু সায়ীদ (রাঃ) বলেন, এ কথা আমি মহানবী (সা.) এর কাছে শুনেছি। (বুখারী শরীফ)। আযানের ধ্বনি কী মধুর, কতোটা হৃদয়গ্রাহী! মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে ধ্বনিত হয় চারপাশ।
মুমিন হৃদয় সাড়া দেয় সেই সুরে, আর দাঁড়িয়ে যায় নামাজে। মুয়াজ্জিনের এই আহবানে কতো কতো মানুষ নামাজ পড়ে, মহান আল্লাহ তাআলার সিজাদাহে লুটিয়ে পড়ে। এর থেকে বড় পাওয়া মুয়াজ্জিনের আর কী হতে পারে!
মহানবী (সা.) বলেছেন, মুয়াজ্জিনের সওয়াব হলো- মুয়াজ্জিনের আযান শুনে যতগুলো মানুষ নামাজ পড়ছে তাদের সবার সমপরিমাণ সওয়াব অতিরিক্ত হিসাবে, বোনাস হিসাবে পাবে। মুয়াজ্জিনের এতো সওয়াবের কথা শুনে মহানবীর (সা.) সাহাবীরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন এই ভেবে যে, মুয়াজ্জিনতো তাদের থেকে অনেক বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে। তখন এক সাহাবী মহানবী (সা.) কে প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা কীভাবে মুয়াজ্জিনের মতো অধিক সওয়াবের অধিকারী হতে পারি?
জবাবে মহানবী (সা.) বলেছিলেন, মুয়াজ্জিনের মতো সওয়াব পেতে মুয়াজ্জিন যা বলে তুমিও তাই বলো। ‘হাই য়ালাস সালাহ, হাই য়ালাস ফালাহ’ বললে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলো। সুবহানাল্লাহ, এই ছোট একটা আমলের কতো সওয়াব ভাবা যায়? মুয়াজ্জিনের আযান শুনে যতো মানুষ নামাজ পড়বেন, সবার সমান সওয়াব তিনিও পাবেন। তেমনি যে ব্যক্তি আযানের জবাব দেবেন, তিনিও মুয়াজ্জিনের সমান সওয়াব পাবেন। তাই, আজ থেকে হেলা আর নয়। আর ভুল করেও এই ছোট আমলটি ছাড়া যাবে না। কতোটুকু সময়? কতোটুকু কষ্ট? বেশি হলে দশ মিনিট সময় লাগবে। আর কষ্ট? কষ্টতো হচ্ছেই না। বিনা কষ্টেই কত্তো সওয়াব পাবো। সুতরাং, আজ থেকে ওয়াদা করে নেন, প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়ার মতোই আযানের জবাব দেওয়াও বাধ্যমূলক করবেন ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন