সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বান্দার হক ঠকানো ব্যক্তি কখনোই ক্ষমা পাবে না

জুমার খুৎবার বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মহা-পরাক্রমশালী ও আসমান জমিনের সকল ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সৃষ্টির সকল চাওয়া-পাওয়া কেবল তিনিই পূরণ করতে সক্ষম। তিনি ব্যতীত অন্য কারো মুখাপেক্ষী হওয়া ঈমানের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। সফলতা অর্জনের জন্য যতই পরমাণু কিংবা স্নায়ু যুদ্ধ করুন না কেন, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত গন্তব্যে পৌঁছা অসম্ভব। আল্লাহর মর্জি ব্যতীত দুনিয়ার কোনো মানব, দানব, শক্তি, প্রযুক্তি, ক্ষমতা, প্রভাব, আপনাকে আমাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করতে পারবে না। এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাকে সাহায্য করার উসিলা মাত্র। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করার পরও তাঁর শরিরে একটি পশমও পোড়াতে সক্ষম হয়নি। অথচ আগুনের বৈশিষ্ট পুড়িয়ে ফেলা। হযরত ইউনুস (আ.)-কে মাছ গিলে ফেলার পরও তিনি অক্ষত ছিলেন কার ইশারায়? তাই দুনিয়ার কারোর থেকে সাহায্য প্রাপ্তির আশা না করে বরং বেশি বেশি আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ মানুষকে রক্ষা কিংবা সাহায্য করার কোনোই ক্ষমতা রাখে না। তাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও সাহায্য প্রাপ্তির জন্য তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলার পাশাপাশি রাসূল (সা.)-এর সুন্নতসমূহ আকঁড়ে ধরতে হবে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুমার বয়ানে খতিব মুফতী মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।

সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। কেউ এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হয়, অনেকেই পারে না। ক্ষমতার এই পালাবদলে যারা বুদ্ধিমান তাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। বিশ্বব্যাপী চলমান ক্ষমতার দ্বন্দে জড়িত গোষ্ঠীরা ক্ষমতাকে আল্লাহর নিয়ামত মনে না করাই সকল বিপর্যয়ের মূল। ক্ষমতার মোহ, সম্পদের লালসা আর কায়েমি স্বার্থে ডুবে থাকলে ধ্বংস অনিবার্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর ক্ষমতার বর্ণনা দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় ইরশাদ করেন ‘বিদ্যুৎচমক তাদের দৃষ্টি কেঁড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। যখনই তা তাদের জন্য আলো দেয়, তারা তাতে চলতে থাকে। আর যখন তা তাদের ওপর অন্ধকার করে দেয়, তারা দাঁড়িয়ে পড়ে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, অবশ্যই তাদের শ্রবণ ও চোখসমূহ নিয়ে নিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান’। সূরা বাকারার অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, প্রত্যেকের জন্যই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেদিকেই সে মুখ করে। সুতরাং তোমরা সৎ কর্মের দিকে ধাবিত হও। যেখানেই তোমরা অবস্থান করো না কেন, আল্লাহ তোমাদের সকলকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান। পবিত্র কোরআনে এরকম অসংখ্য আয়াত রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাগণকে নিজ ক্ষমতা সম্বন্ধে অবগত করেছেন। সুতরাং কখনোই ক্ষমতার বড়াই কিংবা অপব্যবহার করা যাবে না। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই এ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে কিংবা আল্লাহর ক্ষমতাকে অস্বীকার করেছে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে শুকরিয়া আদায় না করে বরং জুলুম করায় মত্ত ছিল তাদের পরিণতি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে।

খতিব সাহেব বলেন, দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। চিরস্থায়ী জীবনের ভালো থাকা মন্দ থাকার মানদণ্ড নির্ধারণ হবে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াবী জীবনে অতিক্রান্ত সময়কার আচার আচরণের ওপর। ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত যেমনি আল্লাহর হক ঠিক তেমনি বান্দারও কতিপয় হক রয়েছে, যাকে হক্কুল ইবাদ বলা হয়। জীবনে চলার পথে হক্কুল ইবাদ যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে। কেননা কিয়ামত দিবসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাইলে কবিরা গুনাসমূহ ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু বান্দার হক অনিষ্টকারীকে যতক্ষণ না ঐ বান্দা ক্ষমা করেন ততক্ষণ আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আপনি আমি আজ আল্লাহ দেয়া ক্ষমতার দ্বারা তাঁরই দুর্বল বান্দার ওপর অন্যায়, জুলুম করলাম। বান্দার প্রাপ্য হক ঠকিয়ে আরাম আয়েশে দিনাতিপাত করলাম। অন্যের কষ্টার্জিত সম্পদ অন্যায়ভাবে কেড়ে নিলাম। অনৈতিক ইচ্ছে ও আবদারের মাধ্যমে মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিলাম। এসমস্ত গুনাহ্ কখনোই আল্লাহ বরদাশত করবেন না। বিভীষিকাময় সেই কিয়ামত দিবসে হাজার কোটি গুনাহ্ থাকা সত্যেও ঠুনকো কোনো নেক আমলের উসিলায় গুনাহ্গার বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন কিন্তু বান্দার হক ঠকানো ব্যক্তিগণ কখনোই ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না। পবিত্র কোরআনে বারবার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে আমানত রক্ষা ও বান্দার হক অনিষ্ট করা থেকে নিজেদের বিরত রাখার প্রতি। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় উল্লেখ করেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক নামাজ, রোজা ও যাকাতের নেকি নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সে এমন অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর অমুক অমুক (অত্যাচারিত) ব্যক্তিকে তার নেকিগুলো দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকি অন্যদের দাবি পূরণ করার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার ওপর চাপানো হবে। অতঃপর (অন্যদের পাপের বোঝার কারণে) তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

সুতরাং আসুন আমরা নিজ নিজ গুনাহের কথা স্বরণ করে আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আল্লাহর দেয়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও বান্দার হক ঠকানো থেকে নিজেদের বিরত রেখে, আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার কাছে মাথা অবনত করি। সমস্বরে ঘোষণা করি বিশ্ব ভ্রহ্মাণ্ডের একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী মহান রাব্বুল আলামিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, নবী (সা.)-কে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। এটা ঈমানের দাবি। মানুষের আত্মীক রোগ দূর করতে হবে। দিলের ভেতরে ওয়াস-ওয়াসার কারণে মানুষ ঈমান হারা হয়ে যেতে পারে। ফেতনার যুগে শয়তানের কথা শোনা যাবে না। নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের দেখানো পথ ধরেই চলতে হবে। খতিব বলেন, সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে নামাজ। আর সর্বোত্তম দরুদ হচ্ছে দরুদে ইব্রাহিম। যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়বে সে কিয়ামতের দিন নবী (সা.)-এর নিকটবর্তী অবস্থান করবেন।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হিজরত করলো সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। আর উলঙ্গ বেহায়াপনায় দেশ ইউরোপে টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে যুবকরা অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগড় পাড়ি দেয়। অনেকের নৌকাডুবিতে অকালে প্রাণ হারায়। এরা ঈমান হারা বিপদগামী। এসব বিপদগামী যুবকদের অবৈধ যাত্রা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সর্বাস্থায় মিথ্যা কথা বলা হারাম। বেশি বেশি তওবাহ ইস্তিগফার করতে হবে। সর্বাস্থায় আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকতে হবে। অজু না থাকলেও জিকিরে মশগুল থাকার চেষ্টা করতে হবে। খতিব বলেন, নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ-অনুকরণেই সর্ব প্রকার কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন