শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এখনো অনিরাপদ সড়ক

দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতের তৈরি এটা ক্র্যাশ : অধ্যাপক ড. শামছুল হক দুর্ঘটনা কমাতে হলে জনগণকে সচেতন হতে হবে : বিআরটিএ চেয়ারম্যান কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যা

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এখনো নিরাপদ হয়নি সড়ক। প্রতিদিনই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। মৃত্যুর তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্য আতঙ্কের কারণ হলেও বস্তবায়ন হয়নি সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এছাড়া গণপরিবহনের নৈরাজ্য তো রয়েছেই। প্রতিবছর দেশে গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়।

আর যারা আহত হয়েছেন তাদের অনেকেই সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। অন্যের বোঝা হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু অথবা পঙ্গুত্বে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। এছাড়া কোনো কোনো সময় সড়কে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলে সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলন শুরু হয়। তদন্ত করার কমিটি হয়। কিছুদিন পর সবকিছু আগের মতোই হয়ে যায়। কোনো বিচার সাধারণ মানুষ দেখতে পায়না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৪টি। তার মধ্যে বাসের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৩৯টি। নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩১টি। এসব গাড়ির বিপরীতে চালকের লাইসেন্স প্রায় ৩০ লাখ। ফলে অনেক গাড়ি লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক চালাচ্ছে বলে তা দুর্ঘটনায় ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকার তার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় এর সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, দেশের বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা স্বাস্থ্যসচেতন নন। চালকদের চোখের সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ। একজন প্রশিক্ষিত ও মাদকমুক্ত চালক নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা কমাতে হলে জনগণকে সচেতন হতে হবে। নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে চালক, যাত্রী, পথচারীদের আইন মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা উদ্যোগের পরও সচেতনতার অভাবে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ মনে করে অবৈধ হাটবাজার, গণপরিবহনের বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের প্রবণতা, পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো, আইন ভেঙে ইউটার্ন করা, নির্দেশনা না মেনে যানবাহন পরিচালনা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করাসহ নানা কারণে সড়ক, মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, সড়কের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সাধারণ মানুষের মানসিকতা।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৯২টি। এতে নিহত হন ৪ হাজার ৯৬৯ জন ও আহত হন ৫ হাজার ৮৫ জন। ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ৯৫৩ জন ও আহত হন ৫ হাজার ২২৭ জন। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭ হাজার ৪২৫ জন ও আহত হন ৪ হাজার ৪৩৯ জন। ২০১৭ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৩ হাজার ৩৪৯টি। এতে নিহত হন ৭ হাজার ৯০৮ জন ও আহত হন ৫ হাজার ৬৪৫ জন।

নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, চার বছরেও সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা তৈরি হয়নি। একটি গোষ্ঠী শুরু থেকেই আইনটিকে দুর্বল করতে চাচ্ছে। আইন সংশোধনের দাবিতে তারা আন্দোলনও করেছে। আইনটি কার্যকর করতে হলে দ্রুত বিধিমালা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য প্রাণহানি ঘটছে। পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। প্রতিবছর সড়কে প্রায় ৮ হাজার মানুষের প্রাণহানির ও ৮০ হাজার মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ করার তথ্য মিলেছে। কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। যার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক ক্ষতি হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতের তৈরি। তাই এটাকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। এটা ক্র্যাশ। চালক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ না হলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। চালকদের দক্ষ বানাতে হবে। যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে সে ম্যানেজ করতে পারে। তাই নিরাপদ চালক তৈরি করা দেশে খুব জরুরি। বিআরটিএর দায়িত্ব চালকদের আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তার পরে লাইসেন্স দেয়া। গাড়ির ফিটনেস প্রক্রিয়া ও চালককে লাইসেন্স প্রদানে বিআরটিএকে আরও সচেতন হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন