শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮ জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ

৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস : নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে জেলা প্রশাসকদের মাইকিং : কয়েক জেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল : সব ধরনের নৌযান বন্ধ : সেন্টমার্টিনে উত্তাল ঢেউয়ে ডুবল ১৬ ট্রল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও উপকূলের নদ-নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে; তাতে প্লাবিত হয়েছে চর ও নিম্নাঞ্চল। উপকূলীয় ১৮ জেলার নিচু এলাকার মানুষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে গতকাল থেকেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দেশের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত মানুষ বাড়িঘরে থাকলেও সবকিছু গুছিয়ে বিকাল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাওয়া শুরু করেন। উপকূলের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, ইন্টারনেট দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন-

কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, মহেশখালীসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন নিচু এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন। গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারির পর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। মহেখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন জানান, উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও কুতুবজোমসহ মহেশখালীতে অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকির মুখে। দুপুরের পর থেকে তাদের সরিয়ে আনার কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সকল সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটি উপজেলায় খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম। ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। মুষলধারায় বৃষ্টি অব্যহত। ভরা জোয়ারে পানির চাপে উপকূলীয় উপজেলা কয়রার কপোতাক্ষ নদের তীরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ও শিবসা নদীর তীরে গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধে ধস শুরু হয়েছে। পাউবো’র সদ্য নির্মিত হরিণখোলার বেড়িবাঁধ ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন মুহূর্তে প্লাবিত হতে পারে কয়রা সদরসহ আশপাশের এলাকা। এদিকে, খুলনায় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে উঠেছেন ৪৫ হাজার মানুষ।

জেলা প্রশাসন জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীতে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই কথা জানানো হয়। এদিকে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বলেন, আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ৭ নম্বর স্থানীয় সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী উত্তাল থাকায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরবর্তী নির্দেশনার আলোকে মাইকিংয়ের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় হাতিয়াতে ২৪২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৩ হাজার ৫৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের জনপদ বৃষ্টির পানিতে ছয়লাব। বিমান বন্দরে সব ফ্লাইট উঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগরের জোয়ারের পানিতে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পাউবো’র হাইড্রোলজি বিভাগ তিন ঘণ্টা পর পর নদীর পানি উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর, দক্ষিণাঞ্চলের নদী বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের নৌযান। ইতিমধ্যে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটর স্বেচ্ছাসেবীরা বেড়িবাঁধের বাহিরের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। পটুয়াখালী ৭০৩, পিরোজপুরে ২৬০টি সহ দক্ষিণাঞ্চরে প্রায় ৩ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত। অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে পায়রা বন্দর ও খুলনা শিপইয়ার্ড সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পায়রা বন্দর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। এসময় পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল মো. সোহায়েল-এনইউপি, পিপিএম, পিএসসি-বিএন বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে মন্ত্রীর সাথে কথা বলেন।

স্টাফ রিপোর্টার, লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, লক্ষ্মীপুরে ১৮৫ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ২৬০ মেট্রিকটন চাল, এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ ৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে ও পরে মানুষকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ৩ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। ৬৬টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। জেলার সরকারি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখার জন্য বলা হয়েছে। গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ এ তথ্য জানিয়েছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লায় গত রোববার বিকেল থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার ভোররাত থেকে শুরু হয়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেলেও পড়ছে মাঝারি বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ।

বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটে বাতাসের সাথে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত রোববার সকাল থেকে টানা দু’দিনের বর্ষণে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ঝড়ো হাওয়ায় উপড়ে পড়ছে গাছপালা। উপকূলীয় উপজেলাগুলো রাস্তাঘাট, পুকুর, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বাগেরহাট শহরের পুরাতন বাজার, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মোংলা বন্দরে পণ্য উঠানামা বন্ধ। ৩ নম্বর বিপদ দেখাতে বলা হয়েছে। বাগেরহাট পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, সোমবার দুপুরের বাগেরহাটে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। রাতের জোয়ারে এটা আরো বাড়বে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, টানা বর্ষনে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমাদের ৩৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে। ২৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বরগুনা জেলা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় উপকূল জুড়ে গতকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের সময় যত এগিয়ে আসছে, বরগুনা উপকূলবাসীর চিন্তা ততই বাড়ছে। তবে সিত্রাং মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ সুপার, প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জেলা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি উপলক্ষে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, আমদের ৬৪২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় গতকাল সকাল থেকেই থেকে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। জেলাজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। উপকূলীয় এলাকায় ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় গত রোববার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলার সকল দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় মোবাকেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারি সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় ৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ১৩ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি হালকা ও মাঝারি ধরণের বাতাস বইছে। মেঘলা আকাশ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। অপরদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সোমবার সকালে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীর জানান, জেলায় ৬১টি সাইক্লোন শেল্টার ও জরুরি প্রয়োজনে ৪২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার ও নগদ টাকাও জমা আছে জানান জেলা প্রশাসক। সভায় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল। গত রোবাবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকায় টানা বর্ষন অব্যাহত রয়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এতে জনজীবনে ভোগান্তি নেমে এসেছে। পটুয়াখালীর পায়রা সহ দেশের সব বন্দরে ০৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সকল মাছধরা ট্রলার সমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংঙ্কর চন্দ্র বোদ্য জানান, উপজেলায় ১৭৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর উত্তাল সাগরে আতঙ্কে উপকূলের মানুষ। সিত্রাং মোকাবেলায় আনোয়ারায় ৫৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র, ৪টি মুজিবকিল্লা ও সিপিপি’র ৪৮ টি ইউনিটে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তত রাখা হয়েছে। উপজেলায় জরুরি প্রয়োজনে কন্ট্রোলরুমসহ যানমালের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে ৪৮টি আশ্রকেন্দ্র, ৪ টি মুজিবকিল্লা রয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। মুজিব কেল্লা গুলোতে গবাদীপশু রাখা যাবে। পাশাপাশি সিপিপি’র এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে রয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে মানুষকে সতর্ক করতে চলছে মাইকিং।

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আশাশুনি উপজেলায় গতকাল সকাল থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলায় ১০৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধের অবস্থা ঝুঁকিতে রয়েছে। দিনের জোয়ারে প্রতাপনগরে একটি বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় মানুষ বাঁধ ঠেকাতে আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। সিপিপি ভলেন্টিয়ার ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনতে কাজ শুরু করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কেশবপুর (যশোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল ভোর থেকে কেশবপুর উপজেলার উপর দিয়ে দমকা হাওয়াসহ ঝোড়ো বাতাস প্রবাহিত হয়ে আসছে। সেই সাথে ভারি বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। গাছের ডালপালা পড়ে বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ রয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম আরাফাত হোসেন জানান, কেশবপুর উপজেলার ৬টি সাইক্লোন সেন্টার , ১১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৩৪টি হাইস্কুল মাদরাসা আশ্রায়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরিচা (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পদ্মা ও যমুনা নদীতে প্রবল ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি, লঞ্চ স্পিডবোটসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে ঘাট এলাকায় ফেরি পার হতে যানবাহনগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ইন্দুরকানীতে ঝড়ের প্রভাবে ইটের ট্রলার ডুবি ও গাছ পালার ক্ষতি হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে কচাঁ নদীতে ইট বোঝাই একটি ট্রলার পানিতে ডুবে যায়, তবে লোকজনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত রোববার সন্ধ্যা হতে ভারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাস শুরু হয়। সোমবার সকাল থেকে সাইক্লোন সেল্টারসহ বিভিন্ন আশ্রায় কেন্দ্রে লোকজন আসতে শুরু করে। আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার সরবরাহের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রস্তুতি চলছে।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রোববার সন্ধায় উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিক জানান, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর সভায় ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং ১ হাজার ৭০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

টেকনাফ (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে সেন্টমার্টিনে ১৬ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। গতকাল ভোর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুবে গেছে ঘাটে নোঙর করা ১৬টি ফিশিং ট্রলার। স্থানীয়রা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে দ্বীপে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন