দেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাাং’। সেই সাথে ভয়াল জলোচ্ছ্বাসের ছোবল অব্যাহত আছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দুর্যোগের কবলে উপকূলজুড়ে লণ্ডভণ্ড দশা। উপকূলবাসীর দুর্ভোগ চরমে। গতকাল সন্ধ্যায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের অগ্রভাগ আঘাত শুরু করে। মাঝরাতে মূল ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। ‘সিত্রাং’র গতিবেগ ঘণ্টায় উঠে ঘণ্টায় ৮৮ থেকে সর্বোচ্চ ১০৫ কিলোমিটারে। ‘সিত্রাং’ ঘণ্টায় ২১ থেকে ৩৩ কি.মি. অর্থাৎ দ্রুত গতিতে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ‘সিত্রাং’র কেন্দ্রস্থল বা ‘চোখ’ উপকূল থেকে প্রায় একশ’ কি.মি. দূরে ছিল। ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করা হয়। সাতক্ষীরা-খুলনা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলভাগে উক্ত বিপদ সঙ্কেত বলবৎ আছে।
৭১৫ কি.মি. দীর্ঘ উপকূল তটরেখায় ১৯টি উপকূলীয় জেলায় ‘সিত্রাং’র বেশি প্রভাব পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ-মধ্য উপকূলভাগে ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) হয়ে দেশের উপকূলজুড়ে মূল আঘাত হানে গতকাল মধ্যরাতের আগে থেকে শেষ রাত অবধি। চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের ছোবল স্মরণকালের মধ্যে ব্যাপক। একই সঙ্গে উপকূলে নদ-নদী-খালের পানি ফুলে-ফুঁসে একযোগে বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে অনেক লোকালয় ও আমন ধানসহ ফসলি জমি। উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতে ও দেশের অভ্যন্তরে অতিবৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূল ও বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কার কথা জানায় পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
অমাবস্যার কারণে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের জোরালো প্রভাব পড়েছে। নড়বড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ উপকূলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। সিত্রাং’র প্রভাবে উপকূলসহ দেশের অনেক জায়গায় থমথমে-গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষণে রাতেই তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরী। চট্টগ্রাম, মোংলাসহ সব সমুদ্রবন্দরে আমদানি-রফতানি মালামাল ওঠানামা, পরিবহন, খালাস কাজ অচল হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ৬০টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। থমকে গেছে জীবনযাত্রা। পাকা, আধাপাকা আমন ধানসহ ফল-ফসল, ক্ষেত-খামারের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে কয়েক শ’ মাছের ঘের ও খামার ভেসে গেছে। দুর্যোগ থেকে জীবন বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটেছে লাখো মানুষ। গুমোট আবহাওয়ায় উপকূলবাসীর মাঝে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। আল্লাহর কাছে বিপদ-মুসিবতে পানাহ চেয়ে বিপন্ন মানুষের বাঁচার আকুতি সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। উপকূলীয় জেলা-উপজেলা মাঠ প্রশাসন, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি ও সতর্কীকরণ সভা হয়েছে। উপকূলবাসীকে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে মাইকিং করা হয়। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল রাতে সর্বশেষ আবহাওয়া সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, উত্তর-পশ্চিম ও এর কাছাকাছি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে। এটি গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৭০ থেকে ২৭৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত ও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গত মধ্যরাত থেকে থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর নাগাদ ভোলার কাছে দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র কেন্দ্রের গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিমি’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল-বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। এসব এলাকায় ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৮ কি.মি. বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। এসব এলাকায় ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৭৫ কি.মি. বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে স্থানভেদে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ রাতে পূর্বাভাসে জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে গতিপথ বজায় রেখে গতকাল মধ্যরাত থেকে আজ মঙ্গলবার ভোররাতে বাংলাদেশের বরিশাল-সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাাং’-এর প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে ব্যাপক। জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও হচ্ছে ব্যাপক। আবহাওয়া বিভাগ দেশের চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে স্থানভেদে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা ঘোষণা করে। বাস্তবে অন্তত ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে উপকূলীয় জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ আরও ভেঙেচুরে যেতে পারে। এর ফলে উপকূলে জনবসতি, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক মাত্রায় হতে পারে। গতকাল রাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের ছোবল শুরু হয়।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে জলোচ্ছ্বাসের বড় আঘাত। প্রথমত, আজ অমাবস্যার তিথির প্রভাব। অমাবস্যার কারণে চদ্র-সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রে পানি অস্বাভাবিক ফুলে-ফুঁসে ও উত্তাল হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত. ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাাং’ বড় আকারের হওয়ায় গতকাল রাত থেকে এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব তথা ঝড়ো-ঝাপটার সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। তৃতীয়ত, উত্তর বঙ্গোপসাগর-উপকূলে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। এতে করে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা হচ্ছে বেশি।
বন্ধ চট্টগ্রাম বন্দর-বিমানবন্দর
ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতের আশঙ্কায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে ‘অ্যালার্ট-থ্রি’ অর্থাৎ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় খোলা হয়েছে চারটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন্দরে এবং বহির্নোঙরে সব ধরনের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেটিতে অবস্থানরত ১৮টি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বহির্নোঙরে ৭০টি মাদার ভ্যাসেলকে গভীর সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে। বন্দর জেটি এবং সীমানায় এখন জাহাজ শূণ্য। জাহাজ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেটিতে পণ্য খালাসে নিয়োজিত সরঞ্জামগুলোর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৯টি ঘাটে মালামাল খালাস বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টা থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিমানবন্দরে যাবতীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ
ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডব থেকে জানমাল রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ। নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলী ছাড়াও জেলার উপকূলীয় বাঁশখালী, আনোয়ারা, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রশাসনের কর্মকর্তা, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা এ লক্ষ্যে কাজ করছেন। গতকাল সকাল থেকেই লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ মোকাবেলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী বলেন, জেলার ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র, এক হাজার ৪৪০টি বিদ্যালয়, নয়টি মুজিবকেল্লা ছাড়াও আশপাশের উঁচু ভবন প্রস্তুত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে ১৩ হাজার ৮০০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন। উপকূলের বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে কাজ করছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলায় একটি এবং ১৫টি উপজেলায় একটি করে ১৫টি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
কন্ট্রোল রুম চালু
নগরবাসীকে জরুরী সেবা প্রদান ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খুলেছে সিটি কর্পোরেশন। সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও কন্ট্রোল রুমের তদারকী করছেন। এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে আশ্রয়ের জন্য উপকূলীয় এলাকায় ৭৪টি সাইক্লোন শেল্টার ও চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করে সেখানে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়, দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জরুরি মুহূর্তে সেবা দিতে জেলার ১৫টি উপজেলায় ২০০টি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি ও নয়টি আরবান ডিসপেনসারির অধীনে নয়টি টিম প্রস্তুত রয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরও পাঁচটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ সবার ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। উপকূলীয় এলাকায় থানা ও ফাঁড়িসমূহকে দুর্যোগকালীন সময়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা দুর্যোগকালীন সেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে, খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানছে। ২০০৭ সালে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ আঘাত হানে। তছনছ হয় সুন্দরবন। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয় ব্যাপক। ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ আঘাত হানে। ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’, ২০১৮ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’, ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’, ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’, ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশের উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন