দেশে শিশুর জিনগত ত্রুটিজনিত ‘স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি’ (এসএমএ) নামক স্নায়ুবিক রোগের চিকিৎসায় প্রথমবারের মত জিন থেরাপি শুরু করেছে সরকারের জাতীয় নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (নিনস)। তবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ কমানোর উপায় বের করার উপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। গতকাল রাজধানীর নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শিশুদের বিরল স্নায়ু রোগের চিকিৎসায় প্রথমবারের মত জিন থেরাপি প্রয়োগ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় স্বাস্থ্য সচিব বলেন, শিশুদের এমন শত শত রোগ আছে, যেগুলো বাবা-মায়েরা ধরতে পারেন না। এসব অভিভাবকদের কষ্ট অনেক বেশি। সে জায়গায় এসএমএ রোগের থেরাপি চিকিৎসায় দ্বার উন্মোচন করেছে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল। তবে ব্যয়বহুল চিকিৎসাটি যদি সাধারণ মানুষের নাগালে আনা না যায়, তাহলে সুফল পাওয়া কঠিন হবে। চিকিৎসা যেহেতু শুরু হয়েছে, আশাকরি ব্যয় কমবে, মানুষ নিতে পারবে।
এদিন বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী নোভার্টিসের উদ্যোগে ২২ মাস বয়সী রায়হান নামের এক শিশুকে ২২ কোটি টাকা মূল্যের এই থেরাপি বিনামূল্যে দেয়া হয়। তবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ বহন সবার সম্ভব নয়। তাই খরচ কমানোর উপায় বের করতে পারলে এই চিকিৎসার সুফল মিলবে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য সচিব।
নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, এই চিকিৎসা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ১০ বছরের ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায়। একটা শিশুকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে আমরা বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছি। সে এখন নিশ্চিতভাবে আকাশ দেখতে পারবে, নিঃশ্বাস নিতে পারবে। হাসপাতালের প্রফেসর ডা. নারায়ণ তার টিম নিয়ে সেটি করেছেন। এজন্য আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, জিন থেরাপির কাজ অনেক ব্যয়বহুল। তবে আন্তরিকতা থাকলে সবকিছু সম্ভব হয়। কোভিডে আমরা এটা করে দেখিয়েছি। মূলত লিডারশিপের কারণে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সেরা। রোগীদের চাপে অনেক সময় অনেক কিছুই করা সম্ভব না হলেও এখানে বিশ্ব মানের সেবা মিলছে। আবার অনেক রোগী বঞ্চিতও হচ্ছে। তিনি বলেন, ৮টি বিভাগে নতুন হতে যাওয়া মেডিকেল কলেজগুলোতে নিউরোসায়েন্সেস বিভাগ চালু হলে এ রোগীদের ঢাকায় আসতে হবে না। একই সঙ্গে সব ‘টার্শিয়ারি’ পর্যায়ের হাসপাতালে স্নায়ু রোগের চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ওষুধের দাম অনেক বেশি। মানুষ যাতে এই সেবা নিতে পারে সেই ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে নোভার্টিস কোম্পানির বাংলাদেশের প্রধান ডা. রিয়াদ মামুন জানান, ২০১৯ সাল থেকে এই জিন থেরাপি দিয়ে আসছে নোভার্টিস। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ জনকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে লটারির মাধ্যমে প্রতিমাসে দুজন করে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনকে বিনামূল্যে এই থেরাপি দেয়া হয়েছে। যত কম বয়সে ডায়াগনসিস করতে পারা যাবে, শনাক্ত ও চিকিৎসা পাওয়া ততই সহজ হবে।
নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ডা. বদরুল আলম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ভর্তিযোগ্য রোগী আসে ১০০ কিন্তু ভর্তি করাতে পারছি তার এক-তৃতীয়াংশ। বাকিরা বিদেশে যাচ্ছে। কিন্তু নিউরোসায়েন্সের চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে পারলে মানুষ বিদেশমুখী হবে না। এখানে যেসব সার্জারি করা হয়, একেকটিতে ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়। তাই, অন্য হাসপাতালের সঙ্গে এ হাসপাতালকে মেলালে চলবে না। অনুষ্ঠানে এসএমএ রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জোবায়দা পারভিন।##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন