অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে পোশাক খাতের রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিং শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অনুমোদন পাওয়ার পর ডিপোতে গতকাল বুধবার থেকে পণ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। এর আগে মঙ্গলবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তিন মাসের জন্য সাময়িক এই অনুমোদন দেয়।
অগ্নি দুর্ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস পর রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় চট্টগ্রামের অন্যতম এই বেসরকারি ডিপোতে (অফডক) ফের কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বিএম ডিপো চালু হওয়ায় চট্টগ্রামের অন্য ডিপোগুলোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনারের চাপ কমবে। একই সাথে তৈরী পোশাক খাতের রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা আরো গতিশীল হবে।
গত ৪ জুন রাতে বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ৫১ ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক। বিস্ফোরণে ডিপোর একাংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এতে শুধু ডিপোর ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকা। দুর্ঘটনায় রফতানি পণ্যবাহী ১৫৪টি এবং আমদানি পণ্যবাহী দুটি কন্টেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণের পর ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামের অন্যান্য বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে। এসব ডিপোতে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কন্টেইনার ও কার্ভাডভ্যানের চাপ এবং জট বেড়ে যায়। বিএম ডিপোতে মোট আমদানি-রফতানি পণ্যের আট শতাংশ ব্যবস্থাপনা হতো। চট্টগ্রামে আরও ১৯টি ডিপো চালু রয়েছে। এসব ডিপোর মূল কাজ রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা। কারখানা থেকে রফতানি পণ্য প্রথমে কাভার্ডভ্যানে এসব ডিপোতে পাঠানো হয়। কাভার্ডভ্যান থেকে রফতানি পণ্য নামিয়ে রাখা হয় ডিপোর শেডে। এরপর কন্টেইনারে বোঝাই করে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় এসব ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশ বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। এর বাইরে খালি কন্টেইনার সংরক্ষণ করাও ডিপোর কাজ।
দুর্ঘটনার পর বিএম কন্টেইনার ডিপোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে ডিপোতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিশ^মানের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়েছে। আগুন নেভাতে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের কাজও চলছে। কাস্টমসের শর্ত অনুযায়ী এসব পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং বাস্তবায়ন করা হয়। এর আগে ডিপো কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট শুধু খালি কন্টেইনার ওঠা-নামা ও সংরক্ষণের অনুমতি দেয় কাস্টমস। তখন থেকে ডিপোর আংশিক কার্যক্রম শুরু হয়। আংশিক চালুর অনুমতির সময় কিছু শর্তও দেয়া হয়। ওইসব শর্তপূরণ করার পর আমদানি-রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা তথা পুরোদমে ডিপোর চালুর জন্য আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পোশাক খাতের রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান জানান, কাস্টম হাউসের পক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর পোশাক খাতের রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়েছে। পণ্য ব্যবস্থাপনায় ডিপোতে যাবতীয় নিরাপত্তা সেইসাথে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি খুব শিগগির আমদানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কাজও শুরু করতে পারব। গত কয়েক মাসে ডিপোতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। কর্মী বাহিনীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পণ্যবাহী কন্টেইনারের জন্য পৃথক শেড নির্মাণ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনুমতি পাওয়া চট্টগ্রামের ২০টি কন্টেইনার ডিপোর একটি বিএম ডিপো। এটিই চট্টগ্রামের তৃতীয় বৃহত্তম ডিপো। দুর্ঘটনার পর বিএম ডিপোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে অন্য ডিপোগুলোর ওপর চাপ পড়ে। এ কারণে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার ও ডিপো মারিকদের সংগঠন-বিকডা বিএম ডিপোর আমদানি-রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দিতে এনবিআরের কাছে চিঠি দেয়। এনবিআর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুশাসন প্রদান করে।
অন্যদিকে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষও যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে সব ধরনের কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে। আবেদনের সাথে দুর্ঘটনার পর এ পর্যন্ত নেয়া বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের বিশেষ করে যেকোন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি বর্ণনায় দেয়া হয়। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে বিএম ডিপোকে পোশাক খাতের রফতানি পণ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিএম ডিপোতে কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়ায় এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এর ফলে অন্য ডিপোগুলোর ওপর রফতানিমুখী পণ্যের চাপ কমবে। সেইসাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমও আরো গতিশীল হবে। তিনি বলেন, রফতানিমুখী পোশাক খাত এখন কঠিন সঙ্কট পার করছে। এ অবস্থায় বিএম ডিপো চালু হওয়ায় আমদানি-রফতানিতে সময় কমে আসবে, এর সুফল আসবে রফতানি খাতে।
২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বিএম ডিপো চালু হয়। ডিপোটির ধারণক্ষমতা ১০ হাজার টিইইউএস। দুর্ঘটনার পর ডিপোটিকে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জামে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন