এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বাংলাদেশের ভোটার হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের পাঁচ কর্মী ও রোহিঙ্গাসহ জালিয়াতচক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অস্থায়ী কর্মচারী পাঁচ ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ইয়াসিন আরাফাত (২২), নূরনবী (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), ফরহাদুল ইসলাম (২৮) ও ইমন দাস (২০), রোহিঙ্গা নাগরিক মো. কামাল হোসেন ওরফে মোহাম্মদ (৪৫), পারভীন আক্তার (২৫), মো. নুরুল আবসার (২৮), মো. সামসুর রহমান ওরফে সামসু মাস্টার ওরফে সোনা মিয়া (৬০) ও মোহাম্মদ কামাল (৪২)।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন গতকাল বুধবার নগরীর মনসুরাবাদ নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ জালিয়াতচক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুই রোহিঙ্গা নাগরিক ভোটার হতে এসেছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার হালিশহর আবাসিক এলাকার হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেন, সামসু মাস্টার রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা করে নেন। পরে তিনি দালাল নুরুল আবছারকে দেন।
আবছার ঢাকায় একটি চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন করেন। এরপর ওই জন্মনিবন্ধন দিয়ে এনআইডি করেন। ইসির সার্ভারে এনআইডিটি দেখা যায়। এ প্রক্রিয়ায় আরো অনেকে ভোটার হচ্ছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সামসু মাস্টার ও নুরুল আবছার এর আগে কক্সবাজারে এনআইডি জালিয়াতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে এসে তারা ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। এ কাজে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করতে আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার কাজে জালিয়াতচক্রটি ঢুকে পড়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের ভোটার করছেন। এ জালিয়াতচক্রে আছে অস্থায়ী ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ করা একদল ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, নির্বাচন কমিশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মী এবং কক্সবাজারের কয়েকজন ব্যক্তি।
এর আগে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও এনআইডি পাইয়ে দেওয়া নিয়ে প্রথম জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন হয়। ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রমজান বিবি নামে এক নারী ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে তৈরি করেন জাল এনআইডি। স্মার্ট কার্ড নিতে চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে সন্দেহবশত তাকে জেরা করা হয়। দেখা যায়, তার জন্মসনদ জাল। অথচ সেই জন্মসনদ ব্যবহার করে তৈরি করা পরিচয়পত্রের তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।
এ ঘটনার পর নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিন, এনআইডি উইংয়ের কর্মী শাহনূর মিয়া, অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুক, মো. শাহীন, মো. জাহিদ হাসান এবং পাভেল বড়ুয়াসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়।
জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়, ইসি’র হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ ব্যবহার করে ২০১৫ থেকে ২১০৯ সাল পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদের এনআইডি পাইয়ে দেওয়া হয়। এদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা। দুদক ১১ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেছিল, যে মামলায় চট্টগ্রাম জেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, রামু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম, অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া এবং টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তাফা ফারুককে আসামি করা হয়েছিল।
এসব মামলা কার্যত হিমাগারে থাকার মধ্যেই তিন বছর পর আরেকটি জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন হয়েছে। তবে এবার গোপনে ইসি’র ল্যাপটপ ব্যবহার করে তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করে রোহিঙ্গা ভোটার করা ও এনআইডি পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এবার সরাসরি ইসি’র চলমান কার্যক্রমের আওতায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হচ্ছে এবং এনআইডি পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন