কবিরাজি পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করছিলেন হেমায়েত ওরফে জাহিদ কবিরাজ। প্রতারণার অভিযোগে হেমায়েতকে আটকের পর জানতে পারে তিনি বাগেরহাটের নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা মনু হত্যা মামলার পলাতক আসামি। যিনি ১৭ বছর ধরে কবিরাজের ছদ্মবেশে ভারত ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বছিলা এলাকা থেকে হেমায়েত খান ওরফে জাহিদ কবিরাজকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, ২০০৫ সালে বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর মনু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হেমায়েত। হত্যাকাণ্ডের পর যশোর হয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। পরে দেশে ফিরে ঢাকার মিরপুর ও পরে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে চালিয়ে যান প্রতারণা। মনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০০৯ সালে হেমায়েতের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। হেমায়েত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে কবিরাজি পেশা শুরু করেন। কবিরাজির পেশার মাধ্যমে নানাভাবে মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করতেন। তবে নারীরাই ছিল তার প্রতারণার মূল টার্গেট। ২০০৩ সালে তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ পিরোজপুর থেকে বাগেরহাটে এসে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন।
২০০৫ সালে মনু মাথাব্যথার কবিরাজি চিকিৎসার জন্য হেমায়েতের কাছে যান। মনুর স্বামী ঢাকায় চাকরি করতেন। মনুকে তার যাবতীয় সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সায় জিনের আসর পড়তে পারে বলে ভয় দেখিয়ে সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। মনুও সরল বিশ্বাসে সম্পত্তির দলিল হেমায়েতের কাছে জমা রাখেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী একদিন মনুকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দলিলে টিপসই নেওয়ার চেষ্টা করেন হেমায়েত। এতে ব্যর্থ হয়ে মনুকে কুপিয়ে এবং শেষ পর্যন্ত গলা কেটে হত্যা করেন তিনি। পরে পরিচয় গোপন করে লম্বা চুল ও দাড়িসহ ছবি ব্যবহার করে জাহিদুল ইসলাম ছদ্মনামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। মিরপুরে থাকাকালীন কবিরাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন হেমায়েত। ভাগ্য পরিবর্তনে তাবিজ, স্বামী-স্ত্রীর কলহ দূরীকরণ, বশীকরণসহ নানা কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন