শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ধৈর্য সাফল্যের চাবিকাঠি

মুফতি মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এবং মানুষকে বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষাও করেন। পরীক্ষায় মানুষ কিভাবে উত্তীর্ণ হন সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য মূলত তিনি মানুষকে নানাভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, ক্ষেতের শস্য ক্ষতিসাধন, সন্তানের বিয়োগ ইত্যাদি মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পরীক্ষায় মানুষ বিশেষ করে মুমিনগণ ধৈর্য ও সাহায্যের মাধ্যমে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন। আর দুর্বল ঈমানদারগণ ধৈর্যহারা হয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন। এমনকি তারা আল্লাহ পাকের পবিত্র মর্যাদায় খারাপ মন্তব্য করতেও ভয় করেন না। আজকের প্রবন্ধে ধৈর্য ও সহমর্মিতা বিশেষ সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করব। ধৈর্যকে আরবিতে বলে ‘সবর’। ‘সবর’ এর আভিধানিক অর্থ ধৈর্য, দৃঢ়তা, বিরত থাকা ইত্যাদি। বিপদ-আপদে, দুঃখ-কষ্টে, বলা-মসিবতে অবিচল চিত্তে আল্লাহ তায়ালার উপর একান্ত ভরসা করে এ কঠিন মুহূর্তকে ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার বিধান মেনে নেওয়াকে ‘সবর’ বলে।

আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, বালা-মসিবত এবং অন্যান্য মসিবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পরীক্ষায় মুমিনগণ অত্যন্ত সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন। দুর্বল ঈমানদারগণ এসব দুঃখ-কষ্টকে ধৈর্যের মাধ্যমে মোকাবেলা না করে বরং সেগুলোকে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব মনে করে। এবং এটার জন্য আল্লাহকে দায়ী করে থাকেন। যা মোটেই কাম্য নয়। মানুষের খারাপ সময়ে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সাহায্য করবেন বলে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
যেসব মানুষ বিপদ-আপদে আল্লাহর উপর ভরসা করবে এবং ঐ বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করবে। ধৈর্যের মাধ্যমে ঐ বিপদ মোকাবেলা করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। দুনিয়া এবং আখিরাতে তাদেরকে সম্মানিত করবেন। এবং তাদেরকে আখেরাতে শান্তির ঠিকানা জান্নাতের মাধ্যমে পুরস্কৃত করবেন। যেমন হাদিসে পাকে এরশাদ হয়েছে, হযরত সালমান ফার্সি (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত’। (উমদাতুল ক্বারী : ১০/৩৮৩)।
ধৈর্য সাফল্যের চাবিকাঠি। মানুষের উপর আপতিত বিপদকে ধৈর্য ধারণের মাধ্যমে মোকাবেলা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ কাজে সফলতা দান করবেন। পক্ষান্তরে ধৈর্যহারা হয়ে পড়লে ঐ কাজে সফল হওয়া যায়না। এ জন্য বিপদ-আপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চাই, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন। যেমন হাদিসে পাকে এরশাদ হয়েছে, হযরত আবু সাঈদ কুদরী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছুই কাউকে দেওয়া হয়নি। (বুখারি : ৫৮১৯)।
বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা মুমিনদের অন্যতম নিদর্শন। এটা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামদের সুন্নাতও বটে। আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামগণ তাদের ওপর আপতিত বিভিন্ন দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-আপদ এবং নানা প্রতিকূলতায় এবং পরীক্ষায় ধৈর্যের মাধ্যমে ঐ বিপদ-আপদ মোকাবেলা করতেন। আর আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রবল ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতেন। বিপদ-আপদে ধৈর্য ও সাহায্য চাওয়ার জন্য আল্লাহ কুরআন পাকে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা : ১৫৩)।
যারা বিপদ-আপদে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে নিজেদের উপর আপতিত বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহকে ডাকে ও তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে অপরিমিত প্রতিদান প্রদান করে থাকেন। যেমনিভাবে তিনি ঘোষণা করেছেন, ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত বিনিময় পুরোপুরিভাবেই দেওয়া হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৪৬)। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। কাউকে ভয়, কাউকে ক্ষুধা, আবার কারো ক্ষেতের শস্য ক্ষতিসাধন করে, আবার কারো সম্পদ বিনষ্ট করে এবং কারো সন্তান বিয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ পরীক্ষা করেন যে, কে এসব বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কে ধৈর্যহারা হয়ে আল্লাহর শানে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও শস্যের ক্ষতি সাধন করে পরীক্ষা করব। আর (এ পরীক্ষায়) ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন। (সূরা বাকারা : ১৫৫)।
পরিশেষে বলতে চাই, মানুষের উপর আপতিত বিপদ-আপদে ধৈর্যহারা না হয়ে ধৈর্যে ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।উক্ত বিপদ-আপদকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে ধৈর্যের পরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে। তখনই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে এবং ব্যক্তি ঐ বিপদ-আপদে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে পারবে। তাই, আসুন বিপদ-আপদে আমরা বিচলিত না হয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করি, যেন তিনি এ বিপদমুক্ত করে আমাদেরকে ধৈর্য ও সফলতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করার তৌফিক দান করেন, আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন