ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে দেশের ৪১৯ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি গাছপালা ভেঙে অনেক এলাকা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। তবে এই ঘূর্ণিঝড়ে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের মোট ৩১টি জেলার আমন ধানের আবাদি জমি নানা মাত্রায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে আমনের মোট ৮০ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর বাইরেও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমির ধানে চিটা পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া আগাম শাকসবজিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার আমন মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি খাত সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে এবার আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে কৃষক সময় মতো জমিতে আমন রোপণ করতে পারেননি। চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছে ৫৬ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমি। এতে আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ লাখ টন কম হবে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে আরও ৮১ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতি হওয়ায় উৎপাদন আরও ১০ লাখ টন কমে যাবে। সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন উৎপাদন কম হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে পড়বে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের সরবরাহ ব্যবস্থায় তৈরি হয়েছে বড় সংকট। আগামী বছর বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরাও দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন। আসন্ন এ সঙ্কট মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিতের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমন উৎপাদনের এই ক্ষতি আসন্ন সঙ্কটে বিপদের মাত্রা আরো বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সিত্রাংয়ের আঘাতে কিছু জমি আক্রান্ত হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম। তারা বলছেন, উপকূলীয় এলাকাগুলোয় এবার দেরিতে ধান আবাদ করায় এখনো গাছগুলো ছোট। কিছু এলাকায় ধান হেলে পড়েছে। এর তথ্য আমরা নিচ্ছি। এতে সামান্য কিছু ক্ষতি হতে পারে। তবে সার্বিক উৎপাদনে এর প্রভাব পড়বে না। উল্টো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টির কারণে তুলনামূলক ফলন ভালো পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. সোলায়মান আলী ফকির ইনকিলাবকে বলেন, সিত্রাংয়ের কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমনের আক্রান্ত জমির মধ্যে যে এলাকায় ধানে ফুল এসেছে সেখানে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকবে। ধানে চিটা হবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো আবাদ বাড়াতে হবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া যেতে পারে। এছাড়া যেহেতু বোরো মৌসুমে সার ও সেচ বেশি প্রয়োজন হয়, সে কারণে কৃষকদের প্রণোদনা দিতে হবে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত জমি নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, উপকূলে খুলনা অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল এ চার জেলায় এবার মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমি ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে খুলনা জেলার ধানি জমি। জেলাটিতে মোট ৯৩ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১৭ হাজার ৯৪২ হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে আক্রান্ত হয়েছে ২১৩ হেক্টর জমির আমন ধান। চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে এবার মোট ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। শুধু আমন ধানেই চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকদের এবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকায় দাঁড়ানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অঞ্চলের ৭ হাজার ২০৮ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নোয়াখালীতে ৮ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার জেলায় ৭৯৮ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরে ১০০ ও ফেনী জেলায় ১১১ হেক্টর জমির আমন ধান আক্রান্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে বরিশালে প্রায় ৩ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসঙ্গে টানা বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে পানিতে তলিয়ে প্রায় ৪ হাজার ৪৪৯ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট নিম্নে তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডব ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জের গুদাম, আড়তে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ’ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পতেঙ্গা, বৃহত্তর হালিশহর, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, বৃহত্তর বাকলিয়াসহ মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা প্রবল জোয়ারে তলিয়ে গিয়ে বাসা, বাড়ি ও মার্কেট, দোকান আড়ত ও গুদামের মালামাল বিনষ্ট হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে তলিয়ে গেছে উঠতি আমন, শীতকালিন নানা শাকসবজিসহ ফল-ফসলের মাঠ। জোয়ারের লোনা পানিতে ক্ষেতের ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর, খামারের মাছ। কৃষি বিভাগের হিসাবে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির আমন এবং ৫০০ হেক্টর জমির শাকসবজি বিনষ্ট হয়েছে।
নোয়াখালী থেকে আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি, ঝড়ো বাতাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ ৫টি উপজেলার অন্তত ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, শীত ও শরৎকালীন শাকসবজি। সিত্রাং-এর প্রভাবে সৃষ্ট গত ২৪ ও ২৫ অক্টোবরের ভারিবর্ষণ, ঝড়ো বাতাস ও অতিরিক্ত জোয়ারের কারণে জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ, জাহাজমারা, সুখচর, হরনি, চানন্দি, তমরদ্দি ইউনিয়নের কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও জেলার কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও সুবর্ণচরেও শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে।
বরিশাল থেকে নাছিম-উল-আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং বনসহ নগর ও গ্রামীণ যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মাঠে থাকা প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার হেক্টর ফসলের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার ঝড়ের ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এরমধ্যে ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের বাদেও মাঠে থাকা বিভিন্ন ধরনের সবজি, পান, কলা ও পেঁপে বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে সিত্রাং-এ ভর করে প্রবল বর্ষণসহ স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
খুলনা থেকে ডিএম রেজা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের গতিপথ পরিবর্তন করায় খুলনা জেলায় সরাসরি আঘাত হানেনি। তবে এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি, মৎস্য সেক্টরে। বিঘার পর বিঘা জমির আমন ধান নুয়ে পড়েছে প্রচণ্ড বাতাসের ঝাপটায়। বেশ কিছু মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। আগাম শীতকালীন তরিতরকারির ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ১৭ হাজার ৯৪২ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত ও ২৯৩ হেক্টর সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিত্রাংয়ে জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় মৎস্য ও কৃষিতে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই কম হয়েছে। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে আমনের ক্ষেত, বেগুন, মুলা, শিম, বরবটি, করলা, ঢ্যাঁড়শ, শশা, খিরাইসহ শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর থেকে এস এম বাবুল (বাবর) জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে মেঘনা উপকূলীয় এলাকা লক্ষ্মীপুর। জেলা সদর, রামগঞ্জ, কমলনগর-রামগতি ও রায়পুরে অন্তত ৩০০ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের মাছের খামার, পুকুর ও ঘেরের মাছ ও ফসলি জমি, ভেঙে গেছে রাস্তা ঘাট। এছাড়া শীতকালীন শবজিÑ শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধা কপি, লাউ, শশা, কুমড়া, করল্লা, কাঁচামরিচ, বরবটিসহ সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পিরোজপুর থেকে এস এম সোহেল বিল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। মৎস্য ক্ষেত্রে ৩২৯টি পুকুর থেকে মাছ বের হয়ে গেছে এবং ৪০ হেক্টর জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ১১৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশি। সিত্রাংয়ের আঘাতে জেলার সাতটি উপজেলায় ৪ হাজার ৬২৫ জন কৃষকের ১১৪ দশমিক ৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন ৮২ হেক্টর, সবজি ২২ দশমিক ৪ হেক্টর এবং সরিষা ১০ দশমিক ২ হেক্টর জমি। এসব ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
ভোলা থেকে মো: জহিরুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলার উপকূলীয় এলাকার কৃষি ও মৎস্য’র ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে কৃষিতে ৩ হাজার ৩২৫ হেক্টর ফসল ও ৬ হাজার ২৮০টি পুকুর, মাছের ঘের ও ৭৯২২টি বাড়িঘড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি অফিস জানায়, ঝড়ের প্রভাবে ৩ হাজার ১৬০ হেক্টর আমন ধান, ১৫০ হেক্টর সবজি, ৩ হেক্টর পান, ৭ হেক্টর কলা ও ৫ হেক্টর জমির পেঁপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে অনেক ফসল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে ৭ উপজেলায় ৬ হাজার ২৮০টি পুকুর ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে এসব এলাকার পুকুর ও ঘেরের মাছ।
পটুয়াখালী থেকে মো: জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পটুয়াখালী জেলায় আমন ফসলসহ শাকসবজি, মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১৬০ হেক্টর আমনের ধানের গাছ ফুল আসা জমিতে পানি প্রবেশ করলেও ক্ষতি হয়েছে ৫৮ হেক্টর আমনের। এ ছাড়া ও ৩৯০ হেক্টর শাকসবজির ক্ষেতে পানি প্রবেশ করলেও ক্ষতি হয়েছে ৬০ হেক্টর শাকসবজির।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, জেলায় সিত্রাংয়ে শীতের শাকসবজি এবং রোপা আমনের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২৬০ হেক্টর রোপা আমনসহ প্রায় ৪ শত ৫২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গছে শীতের আগাম শাকসবজি কফি, লালশাক, পালং শাক এবং মুলার বীজতলা। ব্যাহত হবে আগাম আলু চাষ।
ঝালকাঠি থেকে মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে তাণ্ডবে বিভিন্ন খাতের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এখন জেলার প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ, সড়ক, বেড়িবাঁধ, গাছপালা, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতের প্রায় ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরগুনায় কৃষি ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ জুবায়েদুল আলম জানান, আমন ধানের ক্ষতি তেমন না হলেও জোয়ারের পানি আর বৃষ্টিতে ২০ হেক্টর জমির সবজি এবং ৪ হেক্টর জমির পানের বরজের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রামগতিতে সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে দুই শতাধিক গবাদিপশু, সহস্রাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত, ভেসে গেছে গরু-মহিষ ও নৌকা।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে আমানত উল্যাহ জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতির জলোচ্ছ্বাসে সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমন ফসল ও শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রামগতি-কমলনগর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসের কারণে কয়েকশ’ ঘর ভেঙে গেছে। এর মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ায় অধিকাংশ ঘর ভেঙে যায়। রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্লাহ ইউনিয়ন ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর ঘর ভেঙে গেছে। ২০ জন মালিকের তিনটি বাথানের প্রায় দুই শতাধিক গবাদি পশু ও নৌকা নদীতে ভেসে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন